প্রত্যাবাসনের বদলে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে কেন
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার জনকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল মিয়ানমার। চলতি মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমানের সঙ্গে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী উ থান শিউর থাইল্যান্ডে বৈঠকের পর এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে; কিন্তু ঘটনা ঘটছে উলটো, প্রতিদিনই বাংলাদেশে নতুন রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে। গত এক বছরে বাংলাদেশে নতুন ১ লাখ ৮০ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
গতকাল সোমবার (২৮ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত শনিবার পর্যন্ত নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এরই মধ্যে যৌথভাবে তাদের আঙুলের ছাপও নিয়েছে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)। তাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়াল অন্তত ১৩ লাখ ১৩ হাজারে। তবে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আইরিশের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের অনুমতি এখনো দেয়নি সরকার।
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে ইউএনএইচসিআর। গত সপ্তাহে তারা শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়কে এ চিঠি দেয়। গতকাল রোববার রাতে সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে। সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শনিবার পর্যন্ত দেড় বছরে আসা রোহিঙ্গাদের নতুন হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে গত বছরের মে-জুনের পর। চলতি বছরের প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকির মুখে আছে বাংলাদেশ। তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে দেনদরবার করছে বাংলাদেশ। এখন প্রত্যাবাসনের বদলে আরও নতুন রোহিঙ্গা দেশে ঢোকায় চাপে পড়ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ বছরের প্রথমার্ধে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছিল জাতিসংঘ।
এ জন্য গৃহযুদ্ধে পর্যুদস্ত রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের কাছে জাতিসংঘ ‘করিডোর’ দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। ‘মানবিক করিডোর’ দেয়া অবশ্যই মানবিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই করিডোর ধরে যখন আরও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটবে তখন বাংলাদেশ কী করবে? অনেক দিন ধরে জাতিসংঘ পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণও দিচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, আগামী বছর রোহিঙ্গারা নিজের বাড়িতে গিয়ে ঈদ করবে।
ঠিক কতজন রোহিঙ্গা নিজের দেশে ফিরে যেতে পারবেন, তা অবশ্য বলেননি। যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন ঘটবে তারাও কবে নাগাদ যাবে তারও স্পষ্ট কোনো দিন-তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। এর মধ্যে যদি প্রতিদিনই নতুন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে, এই ভার বহনের শক্তি ও ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে কি না তাও বিবেচ্য বিষয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আর স্পষ্ট পদক্ষেপ জরুরি। পাশাপাশি নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও ঠেকাতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে