Views Bangladesh Logo

গড় আয়ু কমছে কেন?

মানবসভ্যতার ইতিহাসে মানুষের গড় আয়ু এক আশীর্বাদ। প্রাপ্ত তথ্যমতে, আজ থেকে ২০ হাজার বছর আগে মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৩০ বছর। কৃষিবিপ্লবের পর ১০ হাজার বছর আগে তা বেড়ে ৩৮ বছরে দাঁড়ায়। আর শিল্পবিপ্লবের পর বৈশ্বিক গড় আয়ু হয় ৭৫ বছর।

১৯৬০-৬৫ সালেও বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৬ থেকে ৪৯ বছর। ১৯৭৫-৮০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ বছরে। ৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে। ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে গড় আয়ু হয় ৬৫ থেকে ৭০ বছর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালের জরিপের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের সর্বোচ্চ গড় আয়ু ছিল ২০২০ সালে, ৭২ দশমিক ৮ বছর। করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭২ দশমিক ৩ বছরে। ২০২২ সালে তা একটু বেড়ে হয় ৭২ দশমিক ৪ বছর।

‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩’ গত রোববার (২৪ মার্চ) দেশের সামগ্রিক জনমিতির জরিপ জানিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বরাত দিয়ে গতকাল সোমবার (২৫ মার্চ) দেশের প্রধান সব সংবাদমাধ্যম এ খবর প্রকাশ করেছে সবিস্তারে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের গড় আয়ু আগের বছরের চেয়ে কমে ৭২ দশমিক ৩ বছরে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১ জুলাই দেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজারে। বিবিএসের হিসাবে, দেশে পুরুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৮ বছর। অন্যদিকে নারীর গড় আয়ু হয়েছে ৭৩ দশমিক ৮ বছর। এর মানে, গড় হিসাবে এ দেশে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন। প্রত্যাশিত গড় আয়ু মানে হলো, ২০২৩ সালে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা গড়ে ৭২ দশমিক ৩ বছর আয়ু পেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হয়।

খবরে আরও বলা হয়েছে, গড় আয়ু কমে যাবার কারণ মৃত্যুহার বেড়েছে। মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার বড় তিনটি কারণ হিসেবে উঠে এসেছে হৃদরোগ, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগের নাম। খবরের বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু বেড়েছে। এটাও গড় আয়ু কমে যাওয়ার একটা কারণ। প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যু ৩৩ জন। শিশুমৃত্যু বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবিএসের তথ্যে উঠে এসেছে, অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের কথা। বাংলাদেশে অর্ধেকের বেশি শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারে। সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ প্রসবে অস্ত্রোপচার দরকার হতে পারে; কিন্তু অস্ত্রোপচার হচ্ছে ৫০ শতাংশের বেশি।

গড় আয়ু বাড়াকে একটি দেশের উন্নয়নের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ দেশটির সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের বিষয়টি এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। উন্নত দেশগুলোতে গড় আয়ুর হার ৮০ শতাংশের বেশি। সেখানে অনুন্নত দেশগুলোতে গড় আয়ু এখনো ৬২ শতাংশের নিচে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের গড় আয়ু কমছে, কারণ, সব কিছুতেই ভেজাল ঢুকে গেছে। বাতাসে দূষণ, খাবারে ভেজাল। কীটনাশকের জন্য পানি দূষিত হচ্ছে। এগুলো আগে ভালো ছিল। দিনের পর দিন এই দূষণ বেড়ে চলেছে, যা মানুষ কেন সমস্ত প্রাণী জগতের ওপর কুপ্রভাব ফেলছে, যার ফলে মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে।

এসব সমস্যার সমাধান না করলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু হয়তো আরও কমবে। তার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক জীবনযাত্রায় ও অর্থনীতিতে। তাই শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকেই মন দিলে হবে না, খাদ্য-পরিবেশ-প্রকৃতি-সুচিকিৎসা সবকিছুতেই সচেতন হতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ