Views Bangladesh Logo

বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ কেন?

ভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালের বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সময় একজন চিকিৎসক যতটা আন্তরিক থাকেন, নিজের হাসপাতালে তা দেখা যায় না। আবার অনেক সময় হাসপাতালে না গিয়ে শুধু বেসরকারি চেম্বারে রোগী দেখার অভিযোগও বহুদিনের। এমন অবস্থায় দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প প্রায় দুই বছর আগে চালু হয়েছিল; কিন্তু ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ এ সেবা বন্ধ করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে বিপদে পড়েছেন রোগীরা। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

গতকাল সোমবার (৩ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ঘোষণা ছাড়াই বৈকালিক চিকিৎসাসেবা বন্ধ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বৈকালিক সেবা চালু হলেও প্রচারের অভাবে সেবা নিতে আসে না মানুষ। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবের পর অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসকদের ঢাকায় আনা হয়েছে। ফলে চিকিৎসক সংকটের কারণে এমনিতেই সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন করে বৈকালিক সেবা চালু হচ্ছে না। তবে সারা দেশে রেফারেল পদ্ধতির মাধ্যমে সেবা দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা না থাকার পেছনে অন্য একটি কারণ জানা গেছে, এ সময় চিকিৎসকগণ ‘প্রাইভেটে’ রোগী দেখেন। তা নিজস্ব চেম্বারে বা হাসপাতালের ভেতরেই। এ কারণে অনেক রোগী বিকালে হাসপাতালে আসতে রাজি নন। রোগী না আসার অজুহাতে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেছে এটি একেবারেই যুক্তিযুক্ত কারণ না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক বলেন, সকালে যে সেবা রোগীরা বিনামূল্যে নিতে পারেন, সেই সেবা বিকেলে টাকা দিয়ে কেন নেবে? যেমন সকালে ১০ টাকায় সব সেবা পাওয়া যায়। আর বিকেলে শুধু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ৫০০ টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া সকালে ওষুধ বিনামূল্যে থাকলেও বিকেলে টাকা দিয়ে কিনতে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করতে হয় টাকা দিয়ে। এজন্য রোগীরাও আগ্রহী না। এ ছাড়া চিকিৎসকরা বিকেলে বেসরকারি চেম্বারে বসলে বেশি আয় করতে পারেন।

রাজধানী ঢাকা ও শহরাঞ্চলগুলোর চেয়ে করুণ অবস্থা মফস্বল অঞ্চলের। প্রাপ্ত তথ্যমতে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মফস্বলের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা থাকতে চান না। চিকিৎসক না থাকায় বৈকালিক সেবা কার্যক্রম শুরুর পরই বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রকল্প নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও নিরুৎসাহিত করা হয়। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী চিকিৎসকদের ভাতা দেয়ার কথা থাকলেও অনেকেই চিকিৎসা ভাতা না পেয়ে এ সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবা নানা কারণেই বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে; কিন্তু অতিমাত্রায় ভিজিট দিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসাসেবা নেয়ার সামর্থ্য নেই অনেক রোগীর। তাদের কথা বিবেচনা করে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা আবার চালু হোক। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, বৈকালিক সেবা নতুন করে চালু করার পরিকল্পনা নেই সরকারের। সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে কাজ চলছে। দেশে রেফারেল পদ্ধতিতে চিকিৎসা চালুর পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী এক চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে অন্য চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানোর প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিই হচ্ছে ‘রেফারে’। রোগীর বিশেষায়িত সেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিতে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যদি সত্যিই এরকম কিছু হয় ভালো; কিন্তু যত দিন পর্যন্ত তা না হয় ততদিন পর্যন্ত বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। আমরাও চাই একটি ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগে যেন আগের সেবা বন্ধ না হয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ