Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

পেঁয়াজের বাজার বারবার কেন অস্থির হয়?

Jahangir  Alam

জাহাঙ্গীর আলম

সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। দফায় দফায় এর দাম বেড়েছে। এখন আবার কমতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার ৯ ডিসেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। দেশটির অভ্যন্তরীণ পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য এমন ঘোষণা দেয় ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের দপ্তর। এরপর থেকেই বাংলাদেশের বাজারে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। তবে গত এপ্রিল মাস থেকে এর দাম বাড়তে থাকে। জুনের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকায় পৌঁছে। এরপর গত ৫ জুন থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার।

পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে একটু অস্থিরতা হলেই সেই অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে পাইকারি মোকাম থেকে সর্বত্র। স্থলবন্দরগুলোর আড়ত থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়ত পর্যন্ত। কোনো কোনো বাজার থেকে পেঁয়াজের সরবরাহ উধাও হয়ে যায় মুহূর্তে। ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রির জন্য অনেকে দোকান থেকে সরিয়ে দেয়া হয় পেঁয়াজ। এভাবে রাতারাতি পেঁয়াজের মূল্যে লাগামহীন বৃদ্ধি অযৌক্তিক। আমদানি করা পেঁয়াজের সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের দামে উল্লস্ফন অনৈতিক। কারণ দেশি পেঁয়াজের সরবরাহের সঙ্গে ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কহীন। এক্ষেত্রে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ক্রিয়াশীল। আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের মূল্য অস্থিতিশীল হয়ে ওঠায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার পণ্যটির খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ৬৪-৬৫ টাকায়; কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চার গুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। তাদের অন্যায্য মুনাফা প্রাপ্তির লোভের কারণেই মূলত অস্থির পেঁয়াজের বাজার। পেঁয়াজের বর্তমান উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি প্রায় ২২ টাকা। খামার প্রান্তে এর বিক্রয় মূল্য ২৫ থেকে ২৭ টাকা।

বিপণন, পরিবহন, সংরক্ষণ ও ব্যবসায়ীদের লাভ যোগ করে পেঁয়াজের মূল্য ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। মৌসুম শেষে তা সর্ব্বোচ্চ ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। কোনোক্রমেই তা তিন অঙ্ক ছাড়াতে পারে না। পেঁয়াজের দাম ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠা খুবই অস্বাভাবিক ও অন্যায্য। বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বার্ষিক প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টন। আমদানি হয় ৭-৮ লাখ টন। মোট প্রাপ্যতা ৪২-৪৩ লাখ টন। এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ অপচয় হয়। পচে যায় এবং শুকিয়ে যায়। ফলে আমাদের খাওয়ার জন্য নিট পাওয়া যায় ২৮-৩০ লাখ টন। তাতে আমাদের চাহিদা মেটে। গত দুই বছর এমনই প্রাপ্যতা ছিল আমাদের; কিন্তু কোনো বিপত্তি ঘটেনি বা অতি মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়নি। এর কারণ ছিল আমাদের প্রধান রপ্তানিকারী দেশ ভারতে কোনো অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি ঘটেনি পেঁয়াজের। স্বাভাবিক পেঁয়াজ রপ্তানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়নি। এবার তা ঘটেছে। কারণ পেঁয়াজ রপ্তানিকে প্রথমে নিয়ন্ত্রণ ও পরে নিষেধ করে দিয়েছে ভারত। তাতে সুযোগ পেয়েছে আমাদের অসাধু ব্যবসায়ীরা।

তারা সিন্ডিকেট করে কারসাজির মাধ্যমে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ এবারও দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৪ লাখ টন এবং এ নাগাদ আমদাানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টন। তাতে পেঁয়াজের মোট প্রাপ্যতা দাঁড়ায় ৪২ লাখ টন। অপচয় বাদ দিয়ে ন্যূনপক্ষে ২৮-৩০ লাখ টন পেঁয়াজ অবশিষ্ট থাকে। তাতে আমাদের চাহিদায় কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়। লাফিয়ে লাফিয়ে এ পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধি হওয়ারও কোনো যুক্তি নেই। ভারত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে অজুহাতেই অন্যায্য মুনাফা আদায়ের লোভে দ্রুত পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজ বর্ষজীবী কন্দ বিশিষ্ট গুল্ম। এটি অ্যালিয়াসিয়া গোত্রের উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক নাম আলিয়াম সেফা। পেঁয়াজ গাছের ফাঁপা নীলাচ-সবুজ পাতা আছে, যা নলাকার, লম্বা ও খাওয়ার উপযোগী। গাছের গোড়া স্ফীত আকার ধারণ করে। একে বলা হয় বাল্ব বা কন্দ। এটি পরিবেষ্টিত থাকে মাংশাল পত্র দিয়ে।

এটি আমরা খাই বা বীজ হিসেবে ব্যবহার করি। মানব সভ্যতার আদি যুগ থেকেই পেঁয়াজের ব্যবহার চলে আসছে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই। রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় পেঁয়াজ। এটি মসলা জাতীয় শস্য। সবজি হিসেবেও আমরা এর ব্যবহার করে থাকি। বর্তমানে কাঁচা, কুঁচি, চূর্ণ, ভাজা, শুকনো এবং আচার হিসেবে এর ব্যবহার হয়। পেঁয়াজ কুঁচি বা ফালি সালাদের উপকরণ হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। এটি খাদ্যদ্রব্যকে আকর্ষণীয় ও খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি করে। এর পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ অপরিসীম। খাবার দ্রুত হজমকারক ও রুচিবর্ধক হিসেবেও পেঁয়াজ সমাদৃত। পেঁয়াজের আদি নিবাস পশ্চিম এশিয়া। আর্যরা এটি ভারতবর্ষে তথা বাংলাদেশে নিয়ে আসে। এটি বেশ ঝাঁঝালো। জাত ভেদে ঝাঁঝের পার্থক্য ঘটে। পেঁয়াজে আছে ভিটামিন এ, সি, ই ও ক্যালসিয়াম। তাছাড়া আছে লৌহ, আমিষ, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও সালফার। জ্বরে দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকলে পাতলা করে কাটা পেঁয়াজ কপালে রাখলে তাপমাত্রা কমে যায় বলে অনেকে মনে করেন।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় চীনে। এরপর ভারতে। বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। বিশ্বের মোট পেঁয়াজ উৎপাদন প্রায় ২৩ বিলিয়ন টন। চীনে উৎপাদন ২৪৯ লাখ টন, ভারতে ২২৮ লাখ ও বাংলাদেশে ৩৪ লাক টন। সারা বিশ্বের প্রায় ১১ শতাংশ পেঁয়াজ সরবরাহ করে চীন, ১০ শতাংশ ভারত এবং দেড় শতাংশ বাংলাদেশ। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তান, সুদান, ইরান ও রাশিয়ায় প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় থাকা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়ে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে, আয় বৃদ্ধির সঙ্গে পেঁয়াজের ভোগ বাড়ছে, তাতে মোট চাহিদা বাড়ছে পেঁয়াজের। ফলে পণ্যটির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

তাছাড়া উৎপাদন পরবর্তী অতিরিক্ত অপচয় ঘাটতির অন্যতম কারণ। ফলে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে প্রতি বছর। বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বতালিকায় শীর্ষে। এরপর আমেরিকা। ২০২২ সালে ৭ লাখ ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে বাংলাদেশ। আমেরিকার আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার টন। পেঁয়াজ রপ্তানিকারী দেশগুলোর শীর্ষে রয়েছে নেদারল্যান্ড, ভারত, চীন, মিশর, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, উজবেকিস্তান, পেরু ও তুরস্ক। বাংলাদেশ সরকার এবার ভারত ছাড়াও ৯টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ওই দেশগুলোর মধ্যে আছে চীন, মিশর, পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপ ও নেদারল্যান্ডস থেকে পেঁয়াজ আমদানির খরচ বেশি, কারণ শিপম্যান্ট খরচ বেশি। ভারত, চীন, মিশর, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পেঁয়াজ আমদানি করা যায়।

বাংলাদেশ পেঁয়াজের জন্য আমদানিনির্ভর হলেও ক্রমেই এর পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৬-১৭ সালে আমাদের পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ ছিল ১০.৯৮ লাখ টন। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৭-৮ লাখ টনে। এর কারণ অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি। ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশে পেঁয়াজের আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ১.২৮ লাখ হেক্টর এবং উৎপাদন ছিল ১০.৫১ লাখ টন। ২০২১-২২ সালে তা ২. ৫৯ লাখ হেক্টরে এবং ৩৫ লাখ টনে বৃদ্ধি পায়। হেক্টরপ্রতি ফলন বৃদ্ধি পায় ৮.২২ থেকে ১৩.৫১ টনে। দেশের প্রায় সব জেলাতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলো হচ্ছে পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর, নাটোর, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, শরীয়তপুর ও বগুড়া।

আমাদের দেশে প্রধানত দুই মৌসুমে উৎপাদিত হয় পেঁয়াজ। রবি (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) ও খরিফ (এপ্রিল থেকে জুলাই) মৌসুম। মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের ৯৮.৫ শতাংশই রবি এবং শীতকালীন পেঁয়াজ। বাকি দেড় শতাংশ খরিপ বা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ। নতুন উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল জাতগুলোর মধ্যে আছে শীতকালীন মৌসুমের জন্য বারি পেঁয়াজ ১, ৪ ও ৬ এবং গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের জন্য বারি পেঁয়াজ ২, ৩ ও ৫। এদের উৎপাদন ক্ষমতা হেক্টরপ্রতি ১২ থেকে ২২ টন।

পেঁয়াজের বর্তমান সংকট সমাধানের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। অবস্থার প্রেক্ষাপটে আরও ১০ লাখ টন পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন করতে হবে। তার ওপর আড়াই লাখ টন করে উৎপাদন বাড়াতে হবে প্রতি বছর। এর জন্য আবাদি জমির পরিমাণ ও হেক্টর প্রতিফলন দুই-ই বাড়াতে হবে। তবে গুরুত্ব দিতে হবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর। সম্প্রতি নতুন উদ্ভাবিত পেঁয়াজের জাত বারি পেঁয়াজ ৫-এর আবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে গ্রীষ্মকালে। এর উৎপাদন ক্ষমতা হেক্টর প্রতি ১৬ থেকে ২২ টন। আরও উচ্চফলনশীল নতুন জাত উদ্ভাবন করতে হবে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিয়ে পেঁয়াজ উৎপাদনে উৎসাহিত করতে হবে।

এবার পেঁয়াজের দাম দ্রুত বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ ভারতের ওপর আমদানির জন্য অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা এবং ভারতের একতরফা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ। এ ভোগান্তি ২০১৯ এবং ২০২০ সালেও প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশের ভোক্তাগণ। ওই দুই বছরও যথাক্রমে ২ ও ১৪ সেপ্টেম্বর অভ্যন্তরীণ সরবরাহর ঠিক রাখার প্রয়োজনে ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তখনো প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের বাজারে। ওই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার জুলাই-আগস্ট মাসেই বিভিন্ন বিকল্প উৎস থেকে দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নিয়মিতভাবে বাজার মনিটর করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের। সেই সঙ্গে সরকারিভাবে পেঁয়াজের মজুত গড়ে তুলতে হবে যাতে সংকটকালে বাজারে সরবরাহ বাড়ানো যায়। তাতে চক্রান্তকারী সিন্ডিকেটের মূল্য বৃদ্ধির কারসাজি তেমন কার্যকর হবে না। বাংলাদেশে পঁচে যাওয়া ও শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পেঁয়াজের অনেক অপচয় হয়, যা মোট সরবরাহে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এটাকে ন্যূনপক্ষে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এর জন্য যথাযথ সংরক্ষণাগার স্থাপন করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। তাছাড়া পেঁয়াজের উপযুক্ত গ্রেডিং এবং মুড়কীকরণের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা উচিত এবং ঘাটতি কতটুকু, তা সংশ্লিষ্টদের দ্রুত অবহিত করা প্রয়োজন। সে ভিত্তিতে আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সংকট সৃষ্টির আগে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে বাজারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা উচিত।

তাছাড়া বাজারে দাম বেড়ে গেলে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা উচিত। এ ব্যবস্থা আগষ্ট মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চলতে পারে। প্রধান উৎপাদন মৌসুমে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত আমদানি নিরুৎসাহিত এবং রহিত করা উচিত। দেশে বর্তমানে যে পেঁয়াজের সংকট চলছে তা খুবই সাময়িক। দ্রুতই এর সমাধান হবে। ইতিমধ্যেই নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে এবং দেশি ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ধীরে কমে আসছে। আগামী দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তখন দাম আরও কমবে। এক মাস পর স্বাভাবিক হয়ে আসবে পেঁয়াজের বাজার। এরই মাঝে পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে দেশের নাগরিকদের। মনে রাখতে হবে পেঁয়াজ রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলেও অত্যাবশ্যক নয়। এর ব্যবহার কমিয়ে দিলেও কোনো ক্ষতি হবে না।

লেখক: কৃষি অর্থনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। পরিচালক, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস এবং সাবেক উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ