মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপনে অবহেলা কেন?
প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল এলেই আমাদের মনে পড়ে মুজিবনগর সরকারের কথা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদিন মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল। পরে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে জায়গাটির নামকরণ করা হয়- মুজিবনগর। স্মৃতিবিজরিত এই স্থানটিতে ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের প্রস্তাব করেছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালে এই প্রকল্প প্রস্তাব করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির কোনো কাজই শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। তার মানে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের মেয়াদকাল শেষ হতে আর মাত্র দুই মাস বাকি। প্রস্তাবিত ও খসড়া অবস্থাতেই প্রকল্পটি তার বাস্তবায়নের মেয়াদকাল প্রায়ই শেষ করে ফেলেছে।
১৭ এপ্রিল সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, প্রকল্পটি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) মুজিবনগর পর্যটন মোটেলে এক সভা হয়েছে। প্রকল্পটি যাতে দ্রুত অনুমোদন ও কার্যক্রম শুরু হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন এ তথ্য জানান। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তর। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০৯ কোটি ৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে পাল্টে যাবে মুজিবনগরের চিত্র। মুজিবনগরকে দেখেই পুরো মুক্তিযুদ্ধের চিত্রপট পর্যটকের চোখের সামনে ভেসে উঠবে।
প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য, মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণের ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য, শেখ হাসিনা মঞ্চ, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা-সংবলিত ডিওরোমা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের কাজের মধ্যে আরও রয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলির বিবরণ সম্পর্কিত ইতিহাস পরিক্রমা নির্মাণ, ভাস্কর্য উদ্যান নির্মাণ এবং ম্যুরাল ও পেইন্টিং স্থাপন ইত্যাদি। স্কুল, প্লে-গ্রাউন্ড, সুইমিং পুল, পার্কিংসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের কথাও বলা হয়েছে প্রকল্পে।
সংবাদমাধ্যমে আরও জানা গেছে, মুজিবনগরের ঐতিহাসিক আম্রকাননে বর্তমানে ১ হাজার ১০০টি গাছ বেঁচে রয়েছে। পরিচর্যার অভাবে এরই মধ্যে শতাধিক গাছ মারা গেছে। মুজিবনগর আম্রকানন হিসেবে খ্যাত। সেখানে যদি পরিচর্যার অভাবে শতাধিক গাছ মারা যায়, তাহলে সহজেই বোঝা যায় স্থানটি কতখানি অবহেলার শিকার; কিন্তু কেন এই অবহেলা? মুজিবনগর স্থানটির প্রতি অবহেলা প্রদর্শন মানে এক অর্থে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিই অবহেলা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের বিষয়ে বর্তমান সরকার যেখানে এত জোর দিচ্ছে, সেখানে এ ধরনের অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
মুজিবনগর আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা ঘোষণা’ করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেয়ার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশ আজ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র। ঐতিহাসিক এ স্থানটির প্রতি কোনোভাবেই অবহেলা গ্রহণযোগ্য না। মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ-প্রজন্মের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হোক। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সেখানে দেশি-বিদেশি পর্যটনের সংখ্যাও বাড়বে। মানুষ চোখের সামনে দেখতে পারবে সেদিনের ইতিহাস। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্য দিয়ে প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন হোক তাই আমাদের দাবি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে