পোশাক শ্রমিকদের বেতন নিয়ে নয়ছয় কেন?
আজ বাদে কাল ঈদ। শহরবাসী মানুষ দলে দলে বাড়ি যাচ্ছে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ-আনন্দে শরিক হতে। বিপণিবিতানগুলোতেও উপচে পড়ছে মানুষের ঢল; কিন্তু এই আনন্দ থেকে এখনো বঞ্চিত অসংখ্য পোশাক শ্রমিক। গতকাল (৯ এপ্রিল) সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ৬০ শতাংশ পোশাক কারখানার শ্রমিক বেতন পাননি; শিল্প পুলিশ বলছে, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ২ হাজার ৫৩৪ কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ৯টি মার্চের বেতন দিয়েছে। উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছে ২ হাজার ১৮৩ কারখানা। এমন সংবাদ দেশের জন্য খুবই দুঃখজনক।
এ খবর স্বাভাবিকভাবেই সবারই মন খারাপ করে দেয়। ৬০ শতাংশ পোশাক শ্রমিক ২০ লাখের অধিক মানুষ। তাদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের পরিবারের লোকজন। পরিবারের লোকজন পথ চেয়ে আছে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি বাড়ি ফিরবে, সঙ্গে নিয়ে আসবে ঈদের নতুন জামা। অনেক পরিবারই হয়তো অপেক্ষা করছে হাতে টাকা এলে ঈদের বাজারসদাই করবে। এ অবস্থায় সারা মাস কাজ করার পর সেই ঘামে ভেজা শ্রমিক এখনো বসে আছেন কারখানার বারান্দায়, কখন মালিক বেতন দেবেন, বোনাস দেবেন?
যে পোশাক শিল্পের শ্রমিকের ঘামে-শ্রমে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বিদেশি আয় হয়, সেই পোশাক শ্রমিকদের বেতন দিতে কেন দেরি হয়? প্রায় বছরই এমন খবর শোনা যায় ওই কারখানা বেতন দিতে পারেনি, শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে। তাহলে কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ- এত সংগঠন থাকার অর্থ কী? যদিও বিজিএমইএ-এর শীর্ষ নেতাদের দাবি, বেতন ও উৎসব ভাতা নিয়ে বড় কোনো সমস্যা নেই। মঙ্গলবারের মধ্যে সব কারখানায় বেতন-ভাতা পরিশোধ হবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শেষ খবর পাওয়া গেছে, অনেক কারখানার শ্রমিক বেতন পাননি। পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের সঙ্গে আছে পাটকল শ্রমিকদের ভোগান্তির কথাও। যদিও তাদের সংখ্যা কম। শিল্প পুলিশের তদারকির মধ্যে থাকা ৯২ পাটকলের মধ্যে ৮২টিতে গতকাল পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করা হয়েছে খবরে জানা গেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সারা বছর ধরে কাজ করার পরও ঈদের সময় এই অবস্থা হবে কেন শ্রমিকদের নিয়ে? এটা খুবই অমানবিক। শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি দিয়ে দেয়ার ইসলামি বিধান, সেখানে বেতন তুলতে গিয়ে তাকে আরও ঘাম জড়াতে হয়। বেতন, বোনাস তো শ্রমিকের প্রতি দয়া নয়, এটা তার প্রাপ্য, তাও কেন এত টালবাহানা?
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঈদের আগে বেতন-ভাতা পরিশোধের বিষয়ে শ্রম আইন কিংবা বিধিমালায় স্পষ্ট কিছু নেই। এই আইনি জটিলতা ও কিছুসংখ্যক মালিকের খামখেয়ালিপনার কারণে শ্রমিকদের এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়।
আমরা আশা করব, শিগগিরই কঠিন-কঠোর আইনিব্যবস্থার মাধ্যমে এসব খামখেয়ালিপনার অবসান হোক। ঈদের আগে আগে যেন আর কোনো শ্রমিককে পরিবার-পরিজন নিয়ে এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে না হয়। মানবিক দিক বিবেচনা করে সংশিষ্ট সবার এই অনিয়ম দূর করার শুভবোধ উদয় হোক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে