Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

কয়লার দরে এত হেরফের কেন?

Mamun–Or–Rashid

মামুন–অর–রশিদ

বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪

মদানি করা কয়লা দিয়ে দেশে এখন ছয়টি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র চলছে। এসব কেন্দ্রর কয়লার দামে বড় রকমের হেরফের দেখা গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে একটি কেন্দ্র কম দামে কয়লা কিনতে পারলে পাশেরই আরেকটি কোম্পানি কেন বেশি দামে কয়লা কিনবে? বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি’ই বা কেন এটি অনুমোদন করবে?

কেন্দ্রগুলো বিদ্যুতের যে বিল পায় এর একটি অংশ হচ্ছে এনার্জি কস্ট বা জ্বালানির দর। অন্যটি হচ্ছে জ্বালানি বহির্ভূত ব্যয়। সাধারণত জ্বালানি বহির্ভূত ব্যয়ের মধ্যে থেকে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট এবং পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বা ওএন্ডএম কস্ট।

জ্বালানি বহির্ভূত ব্যয়ের ক্ষেত্রেও কোন কোন কোম্পানিকে বাড়তি সুবিধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির সময় জ্বালানি বহির্ভূত দামটি নির্দিষ্ট করা হয়। তবে কেন্দ্রর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যখন যে দামে কয়লা কিনবে তখন সেই দামই পিডিবি’র পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

গত ১০ মাস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কয়লার যে দাম নিয়েছে তাতে দেখা যায় বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি গত বছর জুলাই মাসে (জুলাই-২৩) ইউনিট প্রতি কয়লার দাম নিয়েছে ৫ দশমিক ৯৫ সেন্ট। কেন্দ্রটি পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নামে পরিচিত। একই মাসে আরো দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনে ছিল। এরমধ্যে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি ইউনিট প্রতি কয়লার দাম নিয়েছে ৭ দশমিক ৭৪ সেন্ট। এই কেন্দ্রটি রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নামে পরিচিত। ভারতের ঝাড়খন্ডের আদানি পাওয়ার কোম্পানির কেন্দ্রটি এনার্জি কস্ট বা ইউনিট প্রতি কয়লার দাম নিয়েছে ৬ দমমিক ৭৮ সেন্ট। এই কেন্দ্রটিকে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র নামেই সবাই চেনেন।

এখন যে বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে তারমধ্যে পায়রা, এসএস পাওয়ার ও রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এর বাইরে আদানি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ও বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

এই মাসে দামের হিসেব করলে দেখা যায় রামপাল পায়রার চেয়ে ইউনিট প্রতি ১ দশমিক ৭৯ সেন্ট ও আদানি পায়রার চেয়ে দশমিক ৮৩ সেন্ট বেশি নিয়েছে।

গত বছর আগস্ট মাসে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিট প্রতি কয়লার দাম নিয়েছে ৫ দশমিক ৬০ সেন্ট। একই মাসে রামপাল ইউনিট প্রতি কয়লার দাম নিয়েছে ৫ দমমিক ৯৩ সেন্ট। আদানি নিয়েছে ৬ দমমিক ৮৭ সেন্ট।

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রর কয়লার দাম পড়েছে ৫ দশমিক ২৪ সেন্ট, রামপালে যা ছিল ৫ দশমিক ৮১ সেন্ট, আদানিতে ছিল ৬ দশমিক ৭১ সেন্ট। গত বছর সেপ্টেম্বরেই বরিশাল ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কোম্পানি উৎপাদনে আসে। ওই মাসে তারা উৎপাদনের শুরুতেই কয়লার দাম নেয় ৭ দশমিক ০১ সেন্ট।

গত বছর অক্টোবরে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে ছিল। ওই মাসেই প্রথম উৎপাদন শুরু করে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার।

কয়লার দামের হিসেব করলে দেখা যায় পায়রা গত অক্টোবরে কয়লার দাম নিয়েছে ৫ দশমিক ৪২ সেন্ট। অন্যদিকে রামপাল নিয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ সেন্ট, আদানি নিয়েছে ৬ দশমিক ৪২ সেন্ট, এসএস পাওয়ার নিয়েছে ৬ দমমিক ১৬ সেন্ট।

গত বছর নভেম্বরে এধরনের চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে ছিল। এরমধ্যে পায়রা কয়লার দাম নিয়েছে ৫ দশমিক ৪৩ সেন্ট। এছাড়া রামপাল নিয়েছে ৬ দশমিক ৪৩ সেন্ট, আদানি ৬ দশমিক ৪৭ সেন্ট, বরিশাল পাওয়ার কোম্পানি ৬ দশমিক ৯৭ সেন্ট করে কয়লার দাম নিয়েছে।

গত ডিসেম্বরে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার দাম নিয়েছে ইউনিট প্রতি ৫ দশমিক ৭৬ সেন্ট। এছাড়া রাপমাল ৬ দশমিক ৬৪ সেন্ট, আদানি ৬ দশমিক ১২ সেন্ট, বরিশাল পাওয়ার দাম নিয়েছে ৭ সেন্ট করে।

গত জানুয়ারি মাসে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিট প্রতি দাম নিয়েছে ৫ দশমিক ৮০ সেন্ট, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র দাম নিয়েছে ৬ দশমিক ৬০ সেন্ট, আদানি দাম নিয়েছে ৬ দশমিক ৮৭ সেন্ট ও বরিশাল পাওয়ার কোম্পানি দাম নিয়েছে ৭ সেন্ট করেই।

এর আগে গত বছরের প্রথম তিন মাসের হিসেবেও দেখা যায় কয়লার দামে ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। গত বছর এপ্রিলে যথন কয়লার দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে তখন পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিট প্রতি কয়লার দাম নিয়েছে ৮ দমমিক ১৭ সেন্ট, একই মাসে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ৯ দশমিক ৮৬ সেন্ট, আদানি ৮ দশমিক ৫৩ সেন্ট ও বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ১১ দশমিক ৫০ সেন্ট দাম নিয়েছে।

গত বছর মে মাসে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ৭ দমমিক ৫৯ সেন্ট, রামপাল ৮ দশমিক ৪১ সেন্ট, আদানি ৮ দশমিক ৫০ সেন্ট, বরিশাল ১০ দমমিক ৫৫ সেন্ট দাম নিয়েছে। গত বছর জুনে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ৭ দশমিক ০৯ সেন্ট, রামপাল ৮ দশমিক ৩৩ সেন্ট এবং আদানি ৭ দমমিক ৮১ সেন্ট কয়লার দাম নিয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রর এনার্জি কস্ট বা কয়লার দামের ক্ষেত্রে এমন গড়মিলের কারণে সরকারের বিপুল অঙ্কের আর্থিক লোকশান হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার দামের ক্ষেত্রে সরকারের উচিত একটি দাম নির্ধারণ করে দেয়া। যাতে এর চাইতে বেশি দাম কেউ নিতে না পারেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ