সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার পরও কেন ‘মব জাস্টিস’ থামছে না?
একই দিনে দেশের শীর্ষ দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন মানুষকে পিটিয়ে খুন করেছে খোদ শিক্ষার্থীরা। যারা খুন হয়েছেন তাদের একজন শিক্ষার্থী এবং একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিলেন। অন্যজন ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। যাকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের খবর বলছে, পিটিয়ে হত্যার আগে ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চেয়ার টেবিলে বসিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়। যে ছবিও গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে গেছে। কী একটা নৃশংস সমাজে আমরা বাস করছি! যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেশের সবচেয়ে মেধাবী বলে গণ্য করা হয়- তারাই কথিত মব জাস্টিসের নামে দুজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলল। বিশ্ববিদ্যালয় কি তাহলে খুনি তৈরি করে? বিশ্ববিদ্যালয় কি তাহলে জাস্টিস বা ন্যায়বিচারের বদলে একজন মানুষকে বিনা বিচারে মেরে ফেলার কৌশল শেখায়? বিশ্ববিদ্যালয় কি তাহলে শিক্ষার্থীদের ভেতরে মানবিক বোধ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে? সেখানে কি পড়ানো হয়? নাকি এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা?
মব ও জাস্টিস
ইংরেজি ‘মব’ (Mob) শব্দটি সাধারণত উত্তেজিত বা উগ্র জনতাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি এমন একদল লোককে নির্দেশ করে, যারা কোনো নিয়ন্ত্রণহীন আচরণ করে, বিশেষ করে সহিংসতায় লিপ্ত হয়। মব সাধারণত বড় আকারের হয় এবং তারা তাদের ইচ্ছা বা রাগ প্রকাশ করার জন্য আইন ভাঙতে বা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিতে পারে। ‘মব’ হতে গেলে ন্যূনতম কতজন মানুষের সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন- তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। তবে অনেকে মনে করেন ‘মব’ যেমন একটি সামাজিক সমস্যা, তেমনি মনস্তাত্ত্বিকও। কারণ সমাজের সব মানুষ সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার পরেও কিংবা যথেষ্ট কারণ থাকার পরেও কোনো মবে অংশ নেবেন না।
বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ১৪১ ধারা অনুযায়ী, পাঁচ বা ততধিক ব্যক্তির একটি দল বেআইনি কার্যকলাপে যুক্ত হলে সেটিকে ‘বেআইনি সমাবেশ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বেআইনি সমাবেশ যদি সহিংস হয়, তাহলে সেটিকে ‘মব’ বা ‘দাঙ্গা’ (Riot) হিসেবে ধরা হতে পারে। দণ্ডবিধির ১৪১ ধারায় বলা হয়েছে: An assembly of five or more persons is designated an "unlawful assembly," if the common object of the persons composing that assembly is-
First.-To overawe by criminal force, or show of criminal force, Government or Legislature, or any public servant in the exercise of the lawful power of such public servant; or
Second.-To resist the execution of any law, or of any legal process; or
Third. To commit any mischief or criminal trespass, or other offence; or
Fourth.-By means of criminal force, or show of criminal force, to any person to take or obtain possession of any property, or to deprive any person of the enjoyment of a right of way, or of the use of water or other incorporeal right of which he is in possession or enjoyment, or to enforce any right or supposed right; or Fifth.-By means of criminal force, or show of criminal force, to compel any person to do what he is not legally bound to do, or to omit to do what he is legally entitled to do.
অর্থাৎ অপরাধমূলক শক্তি প্রয়োগ করে বা সেই শক্তির ভয় দেখিয়ে সরকার, আইনসভা বা কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার আইনগত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া; কোনো আইন কার্যকর করার প্রক্রিয়া বা আইনি প্রক্রিয়ার বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টা; কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ (মিসচিফ), অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ (ক্রিমিনাল ট্রেসপাস), বা অন্য কোনো অপরাধ করা; অপরাধমূলক শক্তি প্রয়োগ করে বা সেই শক্তির ভয় দেখিয়ে কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো সম্পত্তির দখল নেয়া, অথবা তাকে তার উপভোগাধীন অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, যেমন পথের অধিকার, পানির অধিকার বা অন্য কোনো অদৃশ্য অধিকার, অথবা কোনো অধিকার বা ধারণকৃত অধিকার জোর করে বাস্তবায়ন করা; অপরাধমূলক শক্তি প্রয়োগ করে বা সেই শক্তির ভয় দেখিয়ে কোনো ব্যক্তিকে এমন কিছু করতে বাধ্য করা, যা সে আইনত বাধ্য নয়, অথবা তাকে এমন কিছু করতে বাধা দেওয়া, যা সে আইনত করতে সক্ষম। এর সবই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এ ধরনের মবের মাধ্যমে কাউকে মেরে ফেলা হলে সেটি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।
মবের বৈশিষ্ট্য
মবের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যেমন মব হতে গেলে কোনো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কিছু লোককে একত্র বা সংগঠিত হতে হবে। এই সংগঠিত হওয়ার কাজটি পূর্বপরিকল্পিত কিংবা হঠাৎ করেও হতে পারে। মবের সদস্যরা সাধারণত উত্তেজিত অবস্থায় থাকে, যা অনেক সময় গুজব বা কোনো সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। মব সাধারণত প্রচলিত আইন বা কর্তৃপক্ষকে উপেক্ষা করে এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। মব সাধারণত হঠাৎ করে গঠিত হয় এবং এর নেতৃত্বে নির্দিষ্ট কেউ থাকে না বা থাকলেও সেই নেতৃত্ব ঘটনা চলাকালে গড়ে ওঠে। অর্থাৎ কেউ একজন হয়তো স্বপ্রণোদিত হয়ে মবের নেতৃত্বে চলে আসে। মবের কাজগুলো সাধারণত সহিংস হয়ে থাকে, যেমন গণপিটুনি, বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ও ভাঙচুর, কাউকে ধাওয়া করে ধরে ফেলা এবং তাকে পিটিয়ে খুন করা ইত্যাদি। এসব কারণে ‘মব’ শব্দটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মবে অংশ নেয়া লোকজন দেশের প্রচলিত আইন-কানুন ও নীতি-নৈতিকতা ভঙ্গ করে অপরাধী অথবা নিরপরাধ কাউকে শাস্তি দেয়।
মব ও জাস্টিস
মব যদি নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহৃত হয়, তাহলে এর সঙ্গে জাস্টিস কথাটি যুক্ত হলো কেন? জাস্টিসের আভিধানিক অর্থ ন্যায়বিচার। কারণ কারও পদ যখন হয় জাস্টিস, তখন তাকে কেবল একজন বিচারক হিসেবে গণ্য করা হয় না বরং বিশ্বাস করা হয় যে তিনি ন্যায়বিচারক এবং সে কারণে জাস্টিস মানে শুধু বিচার নয় বরং ন্যায়বিচার।
কিন্তু মব বা কিছু লোক সংগঠিত হয়ে যখন কাউকে বিনা বিচারে মেরে ফেলে; ধরা যাক তিনি চোর, ডাকাত, ধর্ষক এমনকি ধরা যাক তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী বা তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার গুরুতর অভিযোগ আছ- তারপরও কোনো একজন ব্যক্তি কিংবা কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মবের অধিকার নেই তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলার। রাষ্ট্র কাউকে এই অধিকার দেয় না। দিতে পারে না। দিলে রাষ্ট্রের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা এবং তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো গুরুত্ব থাকে না। সুতরাং যখন কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে কিংবা তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে কিছু লোক কথিত মব জাস্টিসের নামে পিটিয়ে মেরে ফেলে, সেটি কোনো অর্থেই মব জাস্টিস নয়। বরং সেটি মব অ্যানার্কি (গণনৈরাজ্য) এবং দ্বিতীয়ত, সেটি ওই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য অবমাননাকর।
মব জাস্টিসের ইতিহাস
পৃথিবীতে মব জাস্টিসের ইতিহাস নতুন নয়। প্রাচীনকাল থেকেই নানা সমাজে এটি ছিল। বিশেষ করে মানুষ যখন বিশ্বাস করত যে, প্রচলিত আইনানুগ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচার পাওয়া সম্ভব নয়, তখন তারা নিজেদের হাতে বিচারের ভার তুলে নিত। মধ্যযুগে ইউরোপে উইচ হান্টের সময় মব জাস্টিস ছিল খুবই সাধারণ। তখন সন্দেহভাজনদের জনসমক্ষে পুড়িয়ে মারা বা নির্যাতন করার ঘটনা ঘটত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঠারো-উনিশ শতকে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মব জাস্টিস (লিঞ্চিং) চালানো হতো। শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী আদালতের বাইরে গিয়ে বিচার না করেই কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যা করত, যার পেছনে ছিল বর্ণবৈষম্য। পৃথিবীর মানুষ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার পরেও মব জাস্টিস কিংবা মব অ্যানার্কির অবসান হয়নি; বরং এখনো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেই এসব ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষ করে যেসব দেশের বিচার ব্যবস্থা দুর্বল, বিলম্বিত বা যেখানে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই এবং জনগণের বিরাট অংশ যখন মনে করে যে, প্রচলিত ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মব জাস্টিসের পেছনে বড় ভূমিকা রাখে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়া গুজব বা ভুয়া খবর এবং কথিত ধর্মীয় অনুভূতি।
বাংলাদেশে কী হচ্ছে?
দেশের সবচেয়ে ‘প্রেস্টিজিয়াস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’ হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাতে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে ‘চোর’ অপবাদে কিংবা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী- যাকে হত্যার কিছু সময় আগে ওই শিক্ষার্থীরাই ভাত খাইয়েছিল বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে। মৃত্যুর পরে জানা গেছে, তিনি পারিবারিক নানা সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক ভারসাম্যহীন। ভবঘুরে। বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ধরা যাক, মানসিক ভারসাম্যহীনতা কিংবা অভাবের কারণে তোফাজ্জল সত্যিই কারো মোবাইল ফোন কিংবা টাকা চুরি করেছেন (যদিও এটি প্রমাণিত নয়)- তারপরও কি এরকম একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা যায়? খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এভাবে মব সৃষ্টি করে একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে? এটি কোনো সুস্থ, বিবেকবান মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব?
একই দিন ঢাকার অদূরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে। অভিযোগ, শামীম মোল্লা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আন্দোলনরত ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর হামলায় যুক্ত ছিলেন। ধরা যাক অভিযোগটি সত্য। তার জন্য দেশে বিচার ব্যবস্থা আছে। পুলিশ আছে। আদালত আছে। শামীমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারত এবং দ্বিতীয়ত, তার বিরুদ্ধে মামলা থাকলে সেই মামলায় তার অপরাধ প্রমাণিত হলে বিচার হতে পারত; কিন্তু এসব বিচারের অপেক্ষা না করে কেন তাকে মেরে ফেলা হলো? প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নেই বলে? ঘটনা যাই হোক না কেন, এটি মূলত প্রতিহিংসা এবং যে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে তারা নিজেরাই এখন খুনের অপরাধে অভিযুক্ত হবেন।
এ পর্যন্ত কতজন খুন হলো?
গত ২০ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) বরাত দিয়ে অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্টের একটি খবরে বলা হয়েছে, দেশে গত দুই মাসে ৩৩ জনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজনকে পিটিয়ে হত্যার আগে গত মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সদ্যোজাত সন্তান ও স্ত্রীর জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে রাবির মেডিকেল সেন্টারের একটি স্টোরে হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। গত ৫ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় মিজানুর রহমান মিজান নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন লেদু নামের একজনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রাহাত হাসান বিপু, সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন ও সাঈদ আরাফাত শরীফ নামে তিনজনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরে গরুচোর সন্দেহে দুজনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়।
মব জাস্টিস কেন থামছে না?
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কথিত মব জাস্টিসের নামে মানুষ খুন, বিভিন্ন কল-কারখানায় ভাঙচুর-লুটপাট-আগুন, মাজারে ভাঙচুর এমনকি কবরে আগুন দেয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে বারবারই বলা হচ্ছে যে, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। পরিহাসের বিষয় হলো যেদিন (২০ সেপ্টেম্বর) স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়া এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়; আইন নিজ হাতে তুলে নেয়া এবং যে কোনো সম্পত্তি ধ্বংস করা দণ্ডনীয় ও গর্হিত অপরাধ বলে সতর্ক করা হয় এবং যেদিন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও মব জাস্টিস বা গণপিটুনির মতো ঘটনার সঙ্গে কেউ জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়, সেদিনও রাজধানীর খিলগাঁও থানার তালতলার ঝিলপাড় এলাকায় নুরু ইসলাম (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
পুলিশ বলছে, কে বা কারা তাকে পিটিয়ে আহত করে ঝিলপাড় এলাকায় ফেলে যায়। নিহত ব্যক্তি কোথায় থাকতেন এবং কি করতেন, সে বিষয়েও বিস্তারিত জানা যায়নি। এই ঘটনার আগের দিনও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যারা এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এসব হুঁশিয়ারির পরেও কেন পিটিয়ে হত্যা বা মব জাস্টিসের নামে এসব মব অ্যানার্কি থামছে না? রাষ্ট্রের এই বার্তা তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না? তারা কি সরকারের এসব নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না, নাকি কোনো একটি গোষ্ঠী চাচ্ছে দেশে এসব নৈরাজ্য বাড়তে থাকুক- যার সুযোগ নিয়ে তারা অন্য কোনো স্বার্থ হাসিল করবে?
যে প্রশ্নটি জনমনে সবচেয় বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো, রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ কি আদৌ কাজ করছে? তারা কি পুরোদমে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে? সেনাবাহিনীর সদস্যরা যখন মাঠে আছেন এবং যখন তাদের বিচারিক ক্ষমতা পর্যন্ত দেয়া হয়েছে, তখনই বা কী করে এসব ঘটনা ঘটতে পারে? সরকার কি সত্যিই ঠিকঠাক কাজ করছে বা করতে পারছে? যদি না পারে তাহলে কেন পারছে না, তা কি সরকার জানে?
আমীন আল রশীদ: সাংবাদিক ও লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে