Views Bangladesh Logo

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

জীবনানন্দ-জগদীশচন্দ্রের নাম স্থাপনা থেকে বাদ কেন?

মন বিষয় নিয়ে সম্পাদকীয় লেখা যেতে পারে এটা বোধহয় বাংলাদেশের কোনো সম্পাদক কখনো ভাবেননি। পৃথিবীতে অনেক ঘটনা-দূর্ঘটনাই ঘটে, কিন্তু কিছু ঘটনা একেবারেই কল্পনাতীত, ব্যাখ্যাতীত এবং জাতিগতভাবে লজ্জার। তেমন এক লজ্জাজনক ঘটনা ঘটল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা, ভবন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে জীববিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু, প্রখ্যাত রসায়নবিদ ও শিক্ষক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, পদার্থবিজ্ঞানী ও শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বসু, কবি জীবনানন্দ দাশ, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মতো গুণীজনদের নাম। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।

অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও এ নিয়ে তার ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ কয়েকটি হলের নাম পরিবর্তনের ঘটনায় তিনি মর্মাহত। লেখক মঈনুল আহসান সাবের তার ফেসবুক পোস্ট জানিয়েছেন, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জগদীশ চন্দ্র বসু, জীবনানন্দ দাশের নাম ভবন থেকে মুছে ফেলা নিজেকে মূর্খ ও সাম্প্রদায়িক হিসাবে প্রমাণ করা ছাড়া আর কোন অর্জনের মধ্যে পড়ে?

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়, এ নিয়ে সমালোচনার পর এখন আর কেউ দায় নিচ্ছেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খজরে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা বলছেন, মনীষী ও বুদ্ধিজীবীদের নামে থাকা স্থাপনার নাম পরিবর্তনের কথা তারা বলেননি। ‘হল ও বিভিন্ন ভবনের নতুন নামকরণ প্রস্তাবনা কমিটি’ বলছে, তারা শুধু নামের প্রস্তাব সংকলন করে জমা দিয়েছে। সিন্ডিকেট সদস্যরা বলছেন, তারা শুধু কমিটির প্রতিবেদন অনুমোদন করেছেন। অন্যদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. রেজাউল করিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শুধু তার ওপর দায় চাপানো ঠিক না।

দায় তাহলে কার ওপর চাপবে? গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক ধরনের ঘটনাই ঘটছে। এক ধরনের উৎসাহী মানুষ আগ বাড়িয়ে এমন কিছু করছেন যার কোনো ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জীবনানন্দ দাশ, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মতো মানুষদের মতো মহান মানুষদের নাম বাদ দেয়া হচ্ছে কোন যুক্তিতে? মানুষের তো স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ না থাকে তাহলে কীভাবে হয়?

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালীন উপাচার্য ফায়েক উজ জামানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় ১৯টি ভবন ও স্থাপনার নতুন নামকরণ করা হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার ও অধিকার আদায়ে ৩৭ দফা দাবি উত্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেসব দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল ক্যাম্পাসের সব স্থাপনা থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কি এটুকু জ্ঞান নেই যে উল্লেখিত বাদ দেয়া নামগুলো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির নয়। তারা আমাদের জাতির অহঙ্কার। মনীষী ও বুদ্ধিজীবীদের নাম বাদ দেওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক দিন ধরেই সমালোচনা চলছে। এভাবে নাম পরিবর্তনের বিষয়টিকে নিম্ন রুচির পরিচয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট মানুষজন। তারা বলেন, এককথায় এটা খুবই নিম্ন মানসিকতা ও নিম্ন রুচির পরিচয়। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এ ধরনের মানসিকতা থাকতে পারে, এটা চিন্তায়ও আসে না। এটা পুরোপুরি নিন্দনীয় বিষয়।

আমরাও এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক। এরকম কোনো ঘটনায় যেন পুরো জাতিকে লজ্জার মধ্যে পড়তে না হয় তার জন্য জরুরি ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা হোক। এ ঘটনায় এক বিষয় আমাদের চোখের আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, এ জাতিকে আরে শিক্ষিত হতে হবে। সেই আলোকময় শিক্ষার দিকে আমাদের যাত্রা শুরু হোক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ