হাজার কোটি টাকা ব্যয়েও কেন নাব্যতা ফেরানো যায়নি
বাংলাদেশের অনেক নদীরই খনন প্রয়োজন। অনেক নদী নাব্য সংকটে ভুগছে। ফলে দেখা যায় একদিকে শুকনো মৌসুমে সেসব নদীতে নৌ চলাচল করতে পারে না অন্যদিকে বর্ষা এলেই নদীগুলো উপচে পড়ে বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক এক জরিপে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ নদীই নাব্য সংকটে ভুগছে। দীর্ঘদিন ধরে নাব্য সংকটে ভুগছে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদ। নাব্য সংকট দূর করতে ২০১৯ সালে খনন শুরু করেছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ছয় বছরের খননে পানি প্রবাহ তো বাড়ানো যায়নি, উল্টো অন্তত তিন স্থানে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে নদের গতিপথ। কোথাও অপরিকল্পিতভাবে নদের মধ্যেই ড্রেজিংয়ের বালু ফেলে, আবার কোথাও জমি দখল করার জন্য মূল প্রবাহ সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে নদীভাঙনে বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারিয়েছে শত শত মানুষ।
আজ শনিবার (২৪ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত ব্রহ্মপুত্রের সাবেক ধারাটি গাইবান্ধা, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ হয়ে ভৈরবে মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। উজানে এটি সংযুক্ত যমুনা নদীর সঙ্গে। বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের ২২৭ কিলোমিটার এলাকাই খননের দায়িত্বে রয়েছে তারা। প্রকল্প এলাকায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার পরপর বসানো হয়েছে ৯৬টি ড্রেজার মেশিন। বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলায় ৯০ কিলোমিটার এলাকায় খনন চলছে। ২ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো। দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোয় প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৭ সালে।
খননকাজ বিলম্ব ও অনিয়ম নিয়ে আগেও অভিযোগ উঠেছে; কিন্তু তার কোনো সুরহা হয়নি। এ যেন নদ খনন নয়, কতিপয় দুর্বৃত্তের সোনার খনি খনন, যত দেরি করবে, যত অনিয়ম করবে ততই তাদের পকেট ভারী হবে। অভিযোগ উঠেছে, নদের সর্বনাশের পাশাপাশি প্রকল্পটির নামে চলছে সরকারি অর্থ লুটপাটের মচ্ছব। যত্রতত্র বালু উত্তোলন করায় বিভিন্ন স্থানে বর্ষায় দেখা দিচ্ছে নদীভাঙন। এ ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় চলছে বালু লুটপাট। সরেজমিন দেখা যায়, গত ছয় বছরে নদের খনন করা স্থানের অনেকটিতে ফের চর জেগেছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া সব স্থান দিয়ে নৌকা চলে না। পানির প্রবাহ না বাড়ায় ড্রেজিংয়ের পর অনেক স্থানে নদীটি পরিণত হয়েছে সরু খালে। গৃহপালিত পশুর পাশাপাশি মানুষও হেঁটে পারাপার হচ্ছে। এ ছাড়া খনন করা বালু ফেলা হচ্ছে নদের ধারেই। এতে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদেই ফেরত যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকার বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করলেও তারা সুফল পাচ্ছেন না।
অথচ প্রকল্পটি নেয়ার সময় বলা হয়েছিল, খনন শেষ হলে নদে শুষ্ক মৌসুমেও ১০ মিটার পানির প্রবাহ থাকবে। প্রশস্ত হবে ৩০০ মিটার। চলবে জাহাজ। আন্তর্জাতিক নৌরুট হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া উন্নয়ন ঘটবে মৎস্য সম্পদের। এতে বদলে যাবে নদের দুই পাড়ের মানুষের জীবনধারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকায় বছরের পর বছর খনন চললেও নাব্য সংকট কাটেনি। উল্টো পুরোনো গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়ায় নদীতে গেছে অনেকের বাড়িঘর ও ফসলি জমি।
কোটি কোটি টাকা খরচ করেও কেন পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য ফেরানো যায়নি তার জন্য বিআইডব্লিউটিএ-কে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। জবাবদিহির বিষয়টি কঠোর না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানই যা খুশি তা করার সুযোগ পায়। এতবার অভিযোগ ওঠার পরও পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের খননকাজ কেন এত দেরি হচ্ছে এবং যা-ও কাজ হচ্ছে তার সুফল কেন পাওয়া যাচ্ছে না- এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অধিকার জনগণের নিশ্চয়ই আছে। নদী গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়ার কারণে যেসব জনগণের ক্ষতি হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণও সরকারকে দিতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে