Views Bangladesh Logo

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি কেন হঠাৎ রাস্তায়

Kamrul  Hasan

কামরুল হাসান

ত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে দেশজুড়ে শত শত মানুষকে হত্যার অভিযোগে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল।

সেই সময় দলগুলোর মধ্যে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে এই বিষয়ে তীব্র বিতর্কের খবর এবং গুজব স্পষ্ট ছিল। একইসঙ্গে নির্বাচন এবং সংস্কার নিয়ে বিতর্কও ছিল সব রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাই, আওয়ামী লীগের ওপরে নিষেধাজ্ঞা নিয়েও বাতাসে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল।

এরকম অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে কিছু যুবক হঠাৎ করে গত বুধবার রাতে, গণঅভ্যুত্থানের নয় মাস পর, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন- যমুনার সামনে আওয়ামী লীগের ওপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার দাবিতে জড়ো হয়। এনসিপির সঙ্গে পথে নামে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং কিছু নতুন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।

এই সমাবেশের পর তারা শুক্রবার জুমার নামাজের পর জোমায়েত মঞ্চের আয়োজন করে এবং অবশেষে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। রোববার রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জরুরি সভা করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

কেন নয় মাস পর

হঠাৎ করেই কেন এনসিপি এবং তার সমমনা দলের নেতাকর্মীরা এই অপ্রত্যাশিত সময়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে এলেন এই প্রশ্নই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। সেইসঙ্গে সাধারণ নাগরিকরাও কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন।

এ ব্যাপারে এনসিপির নেতারা বলেছেন, এটি একদিনের পরিকল্পিত কর্মসূচি নয়। দীর্ঘদিনের হতাশা এবং ন্যায়বিচারের ওপর অনাস্থা তাদের এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই তারা এই দাবিতে পথে নেমেছিলেন।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে এটা স্পষ্ট যে গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের প্রতি ন্যায়বিচার করার বিষয়ে আমাদের মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছি। ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগ এবং এর মিত্র দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ তাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।’

‘এবং সর্বশেষ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে চলে যান। এই ঘটনার পর সাধারণ ছাত্র এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নেয়।’

এনসিপির আরেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, ‘স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন (এসএডি) এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি (জেএনসি) তাদের “মার্চ ফর ইউনিটি” কর্মসূচি থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে “জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা” জারি করার আহ্বান জানানোর পরই আমাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চুড়ান্ত আকার ধারণ করে।

‘দুর্ভাগ্যবশত, নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা চলার ফলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিটি চাপা পড়ে যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভূমিকা অনেক বেশি বিতর্কিত ছিল। একদিকে তারা আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি করছিল অন্যদিকে তারা নানাভাবে এই প্রক্রিয়াটিকে বাধাগ্রস্ত করছিল।’

‘অন্য কোনো বিকল্প না দেখে, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত রাখার শক্তি হিসেবে এনসিপিকেই এখানে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে এবং অবশেষে আমরা একটি ফল পেয়েছি’, তিনি বলেন।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শনিবার রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিএনপি তা সমর্থন করে। আমরা অসংখ্য সভা, সমাবেশ এবং আলোচনায় এই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা মনে করি, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ এবং আহতদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত। আমরা আনন্দিত যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যায্য বিচারিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে।’

জাপা নিষিদ্ধ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা

যমুনার সামনে এবং পরে শাহবাগ মোড়ে এনসিপির নেতৃত্বাধীন যুবসমাজ যে তিনটি দাবিতে বিক্ষোভ করেছিল তার মধ্যে একটি ছিল জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ।

এর আগে, একটি মিছিল থেকে তারা জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করার দাবি জানিয়েছিল যা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। সর্বশেষ ঘটনাবলির সঙ্গে সঙ্গে তারা আবারও একই দাবি উত্থাপন করেছে।

এদিকে বেশ কয়েকজন নেতা এরই মধ্যে অন্য দাবি আদায়ে সোচ্চার। ১১ মে আব্দুল হান্নান মাসুদ একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, আওয়ামী লীগের পরে জাতীয় পার্টির (জাপা) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে।
সেখানে এনসিপির অনেক সমর্থকও প্রকাশ্যে জাপার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন।

তবে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মুখপাত্র সামান্থা শারমিন বলেছেন যে, সরকার তাদের দাবি আংশিকভাবে পূরণ করেছে। তারা এখন শহীদদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার এবং আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাছাড়া, তারা জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্যও অপেক্ষা করছেন বলে জানান তিনি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ