দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কেন হঠাৎ বাড়তি করারোপ?
শীতের মাঝামাঝি সবজির দাম কিছুটা কমতে শুরু করলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এখনো লাগামছাড়া। চাল-ডাল-তেলের মূল্য নাগালের বাইরে। কিছুদিন আগে বেড়েছে মুরগির দাম। এর মধ্যে নতুন বছরের শুরুতেই ভোক্তাদের জন্য দুঃসংবাদ: ৬৫ পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। আকস্মিক এই ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে আইএমএফের চাপে। আবার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে হঠাৎই ভ্যাট, সম্পূরক শুল্কসহ বিভিন্ন ধরনের কর বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৬৫ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হবে। এমন খবর মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগজনক।
গত বুধবার (১ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদনও দিয়েছে। শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ থেকে ভ্যাট বাড়ানোর আদেশ জারি করা হবে বলে সূত্রটি জানায়। গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রেস্তোরাঁ, পোশাক, হোটেল ছাড়াও অন্য যেসব খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসতে যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো উৎপাদন পর্যায়ে বিস্কুট, আচার, সিআর কয়েল, ম্যাট্রেস, ট্রান্সফরমার, টিস্যু পেপার ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড বানানোর সময়ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতির সামগ্রিক বাস্তবতায় সরকারের ওপর দায়দেনার চাপ বাড়ছে। সরকারের অর্থ দরকার। তাই বিভিন্ন পণ্য-সেবার ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের ওপর খরচের চাপ কিছুটা বাড়বে- এটা সত্য। আবার আমাদের রাজস্ব ও জিডিপি অনুপাত খুবই কম। সেটি বাড়ানোও দরকার। এ জন্য প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে মধ্যমেয়াদি উদ্যোগ নেয়া জরুরি। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে সাধারণ মানুষ যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকেও নজর দিতে হবে।
যদিও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) এবং শুল্ক বাড়ানো হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, কিন্তু ৬৫টি পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ কর বাড়লে কেন ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে না তাতে কোনো যুক্তি নেই। হয়তো রেস্তোরাঁয় খেতে না গেলে, পোশাক না কিনলে, ভ্রমণ করতে না গেলে এই বাড়তি ভ্যাট গুনতে হবে না, কিন্তু যে ভোক্তা ও বিক্রেতারা যে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং তাতে করে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বেই এই সত্য কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনসাধারণ। একসঙ্গে এতগুলো পণ্যের ১৫ শতাংশ ভ্যাট না বাড়িয়ে আরও কম পণ্যের ওপর আরও কম কর আরোপ করলে জনগণ হয়তো কিছুটা স্বস্তি পেতেন। এতদিন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বা এসি রেস্তোরাঁয় খাবারের বিলের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেয়া হতো। সেটি এক ধাক্কায় ১৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়া একটা বিরাট ধাক্কা বটেই। এতে করে নিশ্চিতভাবেই রেস্তোরাঁয় ক্রেতার সংখ্যা কমবে। কমবে ভ্রমণসহ অন্যান্য বিলাসী সেবাও। এভাবে গণহারে কর না বাড়িয়ে সরকার ট্যাক্স আদায়ের দিকে মন দিতে পারতেন। এভাবে আইএমএফের শর্তে কর বাড়িয়ে ঋণ নিয়ে জনগণকে চাপের মধ্যে ফেলা কতটা সুবুদ্ধির পরিচয় দেয়া হলো তা ভবিষ্যতেই বোঝা যাবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে