Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বাসা খালি রেখে শিক্ষকদের শহরে থাকা কেন?

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আবাসিক ভবন আছে, তারপরও নানা অসুবিধা ও প্রয়োজনীতার দোহাই দিয়ে অনেক শিক্ষকই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের বাস করেন না, পরিবার নিয়ে তারা বাস করেন শহরে। এতে শিক্ষকদের কিছু সুবিধা হলেও ছাত্রদের খুব অসুবিধা হয়। শিক্ষকদের অনেকে হলে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন; কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকায় তাদের সব সময় পাওয়া যায় না। অন্যদিকে বাসা খালি পড়ে থাকলে আয়বঞ্চিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকদের মতো কর্মকর্তারাও ক্যাম্পাসের বদলে বাইরে থাকেন।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসা খালি পড়ে আছে, শিক্ষকরা থাকেন শহরে। দেশের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গড়ে প্রায় ২৯ শতাংশ বাসা খালি পড়ে আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা আছেন ৭ হাজার ৫০ জন।

এর মধ্যে শিক্ষক ৪ হাজার ৩১১ এবং কর্মকর্তা ২ হাজার ৭৩৯ জন। বিপরীতে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট বাসা রয়েছে ৯৮০টি, যার মধ্যে ২৮৫টিই খালি পড়ে আছে। এমন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসনে বসবাস না করার কয়েকটি কারণের কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনে থাকলে বেতনের বাড়ি ভাড়ার অংশ কেটে নেয় প্রশাসন।

পদমর্যাদা ভেদে তা মূল বেতনের ৩০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। এই টাকার চেয়ে অনেক কম ভাড়ায় শহরে থাকা যায়। দ্বিতীয়ত, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শহর থেকে দূরে। সন্তানদের পড়াশোনাসহ নানা কারণে শিক্ষকরা শহরে থাকতে পছন্দ করেন। তৃতীয়ত, কিছু ক্ষেত্রে বাসা পুরোনো। সুযোগ-সুবিধাও নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসনে বসবাস করলে শিক্ষকদের যে কিছু অসুবিধা হয় তা সত্য; কিন্তু গণহারে শিক্ষকরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসনে বাস করা বন্ধ করা দেন তাহলে তো দেশ-জাতির জন্য আরও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম প্রশ্ন, তাহলে এত খচর করে সরকারি টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আবাসন তৈরি কেন? বাসা খালি পড়ে থাকতেই আরও ভবন তৈরি কেন? তার সরকারেরও কিছু পরিকল্পনার অভাব আছে। দ্বিতীয় প্রশ্ন, শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে প্রশাসনিক কাজে যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয় তার দায়ভারও তো শিক্ষকরা এড়িয়ে যেতে পারেন না।

এরকম অভিযোগ বাংলাদেশের অনেক চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে আছে। তারা মফস্বল শহরে গিয়ে বাস করেন না। প্রয়োজনের সময় তাদের ডেকে পাওয়া যায় না। এরকমটা যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে হয়, তাহলে কী হবে? তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে না। শিক্ষক ও চিকিৎসকরাও যদি নিজেদের সুবিধার কথা ভেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা ছেড়ে শহরে গিয়ে বাস করতে থাকেন তাহলেও এরকম কিছু সমস্যা হতে পারে।

শিক্ষকদের যেমন তাদের দায়িত্বের কথা ভাবতে হবে, তেমনি সরকারকেও তাদের কিছু বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। একটা সুবিধা হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় ভাড়া কিছু কমানো। শহরের কিছু সুবিধা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে তৈরি করে। শিক্ষকদের সন্তানদের জন্য ভালো স্কুল তৈরি করা। আমাদের দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালই দেখা যায় শহরের অনেক বাইরে।

ফলে নাগরিক কিছু সুযোগ-সুবিধা পেতে সেখানকার আবাসিক শিক্ষকদের অসুবিধা হয় তা সত্য। বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা না হলে উভয়মুখী এসব সমস্যা বাড়তে থাকবে। আমরা চাই শিক্ষকদেরও অসুবিধা না হোক, শিক্ষকদের জন্য নির্মিত বাসাগুলোও খালি পড়ে থাকুক। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে দোষারূপ না করে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিলেই এরকম বিড়ম্বনায় কাউকে পড়তে হবে না।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ