Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকায়

ডিএফসি ৬০ বিলিয়ন ডলার কি পাচ্ছে বাংলাদেশ?

Manik Miazee

মানিক মিয়াজী

শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। মার্কিন অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলে আছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুও।

নয়াদিল্লি সফর শেষে শনিবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছান ডোনাল্ড লু। অন্যরা আগেই এসেছেন সরাসরি ওয়াশিংটন থেকে। এই সফরে গুরুত্ব পাবে মার্কিন বিনিয়োগ। চূড়ান্ত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশনের (ডিএফসি) ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্তও।

বাংলাদেশে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন চাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেন আবারও ঘুরে দাঁড়ায় এবং অব্যাহত থাকে উন্নয়ন অগ্রযাত্রাও। ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের (অর্থ মন্ত্রণালয়) অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নেইম্যানের নেতৃত্বে এই সফরে তাই বাংলাদেশ-আমেরিকার সম্পর্ক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক বিষয়েই গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে ইউএস সরকারের সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ না থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের সঙ্গে ভালোরকমের বোঝাপড়া রয়েছে বলে জানে কূটনৈতিক পাড়া।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র জানান, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকারে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সফরকালে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন। ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈঠকে আন্তঃসংস্থা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যোগ দেবেন তিনি। যে দলে রয়েছেন দেশটির ট্রেজারি বিভাগ, ইউএসএআইডি এবং বাণিজ্যিক প্রতিনিধিরাও। নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আলোচনা হবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়েও।

২০২২ সালের ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের এক সেমিনারে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন বা ডিএফসি ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন নিয়ে কংগ্রেস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ জিএসপির জন্য যোগ্যতা অর্জন না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ডিএফসি-র অর্থায়নের যোগ্যতাও অর্জন করবে না। আমরা আশা করি যে, বাংলাদেশ শিগগিরই শ্রমিকদের অধিকার ও কর্মস্থলে নিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রগতি সাধন করবে। ফলে অচিরেই দেশটি ডিএফসি-র বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো বেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে।’

ডিএফসি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে মিলে জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও প্রযুক্তির মতো খাতগুলোতে প্রকল্প তৈরিতে কাজ করে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বেশিরভাগ উপদেষ্টার সাথেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও দেশটির বিজনেস ফোরামের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এবং এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য কতটুকু উপযোগী বলে তারা মনে করছে- সেটাই এই সফরে দেখার বিষয়, বলছেন পররাষ্ট্র বিশ্লেষকরা।

চারটি কারণে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বাংলাদেশে তাদের এই মুহূর্তে বিনিয়োগ করা উচিত। প্রথমত, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের দ্রুততম সময়ে বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দ্বিতীয়ত, একটি বিশাল এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত -শ্রেণির জনসংখ্যা রয়েছে এই দেশে। ১৭ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে দেশটি এখন বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ, যা যুক্তরাজ্যের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি এবং কানাডার চেয়ে চারগুণ বেশি। যেকোনো কোম্পানি এখন বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারলে তাদের জন্য প্রজন্মান্তরে বিনিয়োগের লাভ ফেরত পাওয়া নিশ্চিত। তৃতীয়ত, বাংলাদেশে কর্মে আগ্রহী ও ইচ্ছুক জনবল রয়েছে। এই দেশের জনবল তরুণ-বয়সী এবং এখানে সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। চতুর্থত, এই দেশের বাজারে যে কোম্পানিগুলো শুরুর দিকে প্রবেশ করবে তারা পরিপক্ক বিনিয়োগ গন্তব্যগুলোর তুলনায় কম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের চলমান এই সফরকে আগামীদিনের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও। তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে বিস্তর ও বহুমুখী আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন মার্কিন প্রতিনিধিদলটি।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ