Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

স্মার্ট বাংলাদেশের পুলিশ কি হাত উঁচু করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করবে?

Mamun–Or–Rashid

মামুন–অর–রশিদ

সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

স্মার্ট বাংলাদেশের পুলিশ আর কত দিন হাত উঁচু করে ট্রাফিক কন্ট্রোল করবে! খুব সাদাসিধে প্রশ্ন। যদিও এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য কেউ নেই। রাজধানী ঢাকাতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে। আজ থেকে বহু বছর আগে সাধারণ মানুষ এই ব্যবস্থার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেছিল; কিন্তু কি জানি কি হলো সিগন্যাল বাতিগুলো রেখেই রাস্তায় মানুষ নামানো হলো। আর স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতিগুলো অকেজো হয়ে পড়লো।

দেশে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েতে এখন গাড়ি চলছে। মাথার ওপর দিয়ে পুরোদমে চলছে মেট্রোরেল। বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে বহুদিন আগেই খুলে দেয়া হয়েছে। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সূচনা হয়েছে। সেই দেশে কেন এখনো আধুনিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে না? সাধারণ মানুষ সিগন্যাল মানতে চাইবে না বলে যে প্রচারণা রয়েছে তাকি আসলেই ঠিক? অবশ্যই ঠিক না।

কেন ঠিক না, সেই ব্যাখ্যায় সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার কথা বলছি শুনুন। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থেকে উঠে তিনশ ফিট গিয়ে নামবো। কিছু দূর গিয়েই মাথার ওপর বিল বোর্ডের বার্তায় লেখা স্পিড ক্যামেরা দিয়ে গতিসীমা পরিমাপ করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এবার চালক বাধ্য হয়ে গাড়ির গতিবেগ ৮০ থেকে ৬০ কিলোমিটারে নামালো। কারণ সে জানে এই সীমা অতিক্রম করলে স্বয়ক্রিয় মামলার ফাঁদে পড়বে। আরও একটি উদাহরণ দেই ইদানীং মহাসড়কে স্পিড গান নিয়ে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা দাঁড়িয়ে থাকে। গতিসীমা বিপজ্জনক পর্যায়ে গেলেই চালকদের ধরা হয়। বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস ওয়েতে ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। এসব ক্যামেরা যখন কাজ শুরু করল তখন চাইলেও এই রাস্তায় ১২০ বা ১৪০ কিলোমিটার গতিতে আর গাড়ি চালানো যাবে না। নিয়ন্ত্রিত গতিসীমার বাইরে গেলেই মামলা। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই যে রিকোয়েস্ট করে ছুটে আসা যাবে। ফলে এখানে সবাই সাবধান।

কিন্তু শহরের মধ্যে পরিস্থিতি কেন বদলাচ্ছে না। কেন ট্রাফিকিং সিগন্যাল স্বয়ংক্রিয় হচ্ছে না। একবার ভাবুন তো রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে মাথার ওপর দিয়ে মেট্রো যাচ্ছে। আর এপাশ থেকে ওপাশে দুজন ট্রাফিক দৌড়াচ্ছেন হাত দেখিয়ে গাড়ি থামাতে। এই দুটি কি ভিন্নমুখী চিত্র নয়। একদিকে উন্নয়ন অন্যদিকে সনাতনী ট্রাফিকিং সিস্টেম।

আগের যে খবর, তা হচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, শহরের ৭২টি গুরুত্বপূর্ণ মোড় রয়েছে। এর মধ্যে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগে ৩৪, পূর্ব বিভাগে ১২, উত্তরে ১১ ও পশ্চিমে ১৩টি ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে। ২০০৯ সালের ২২ নভেম্বর এসব সিগন্যালে বাতি চালু করা হলেও অল্প দিন যেতেই তা শিথিল হয়ে যায়। পরে একে একে বিকল হয়ে পড়ে বাতিগুলো। এসব মোড়ে ২০০২ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে (প্রায় ২৫ কোটি টাকা) আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্প। তবে এর পরেও আবার রাজধানীতে স্বয়ক্রিয় ট্রাফিকিং ব্যবস্থা চালুর জন্য সিগন্যাল বাতি বসানো হয়েছে; কিন্তু তারপরও কোনো কাজে আসেনি।

রাজধানীতে শব্দের গড় মাত্রা ৮০ ডেসিবলের কাছাকাছি। রাজধানীর যে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো রয়েছে সেখানে ১০ মিনিট দাঁড়ানোই অনেক কঠিন বিষয়। সেখানে টানা আট ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য বিষয়। আমরা আমাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে কিছু মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছি। শব্দের তীব্রতা মানুষকে যেমন বধির করে দেয়, তেমনি এতে করে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হয়। টানা শব্দ দূষণের মধ্যে অবস্থান করলে সাধারণ মানুষের জন্য এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী রাজধানীর নীরব এলাকায় দিনেরবেলা শব্দের মাত্রা ৫০ ডেসিবল এবং রাতে ৪০ ডেসিবল হবে। এ ছাড়া আবাসিক এলাকায় দিনেরবেলা ৫৫ এবং রাতেরবেলা ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনেরবেলা ৬০ রাতেরবেলা ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনেরবেলা ৭০ এবং রাতেরবেলা ৬০, শিল্প এলাকায় দিনেরবেলা ৭৫ এবং রাতেরবেলা ৭০ ডেসিবল হবে শব্দের মাত্রা।
কিন্তু একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাব বলছে, রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দিনেরবেলা ১০০ দশমিক ৬৫, প্রেস ক্লাবে ৯২, নয়াপল্টনে ৯০, দৈনিকবাংলা মোড়ে ৭১ এবং জিরোপয়েন্টে শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবল। অর্থাৎ কোথাও কোথাও পরিবেশ অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া মাত্রার দ্বিগুণ শব্দের মধ্যে ঢাকার ট্রাফিকদের কাজ করতে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে দেশকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের ভিশন ঘোষণা করেছে। এখন এই ঘোষণায় সব কিছু স্মার্ট হলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণও স্মার্ট হওয়াটা যৌক্তিক। ফলে স্মার্ট বাংলাদেশে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে সেই যাত্রা শুরু হতে পারে।

শেষ করছি একটি ছোট ঘটনা দিয়ে, বেইজিংয়ের রাস্তায় হাঁটছি। রাত তখন ২টা বাজে। ডাউন টাউনে হোটেলের সঙ্গেই বড় রাস্তা। সেই রাস্তার ওপর একটা ফুট ওভারব্রিজ। রাস্তায় অত রাতে কিছুই নেই। হঠাৎ দেখলাম লালবাতি জ্বলল আর একটি একটি কাভার্ডভ্যান দাঁড়িয়ে গেল। সবুজ বাতি জ্বলে উঠতে ভ্যানটি আবার গন্তব্যে ছুটল।

এখন কেউ যদি বলেন, দেখুন কত ভালো জাতি রাতে কেউ নেই দেখে, জেনে বুঝেও আইন মানছে। তাদের কারেকশন করে দিয়ে বলতে চাই, ওখানে ক্যামেরা আছে। লালবাতি দেখে না থামলে নিজেরই লালবাতি জ্বলে যেত।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ