রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কি বন্ধ হবে?
আজ ২৮ এপ্রিল, ২০২৫। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ৩ বছর ৩ মাস ৫ দিনে গড়াল। অর্থাৎ ১ হাজার ১৫৯ দিনে। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির দিক দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ যুদ্ধ ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ। ক্ষতিটা যদিও সবচেয়ে বেশি হয়েছে ইউক্রেনের; কিন্তু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে এ যুদ্ধ সারা বিশ্বকেই নানাভাবে ভোগাচ্ছে; বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়াকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন এবং তার সহযোগিতায় যুদ্ধ বন্ধের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছিলেন।
গত শুক্রবার ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন একটি চুক্তি সই’ করার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। শুক্রবার মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বৈঠক করার কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প এমন মন্তব্য করলেন।
এরপর গত শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিতে রোম সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৈঠক করেছেন। ভ্যাটিকানের বিশাল গির্জার ভেতরে তারা একান্তে বৈঠক করেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় অচলাবস্থা দূর করতে এই বৈঠক হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাম্পের ওভাল অফিসে বৈঠকের পর এবার দ্বিতীয়বারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মুখোমুখি সাক্ষাতে বসলেন ১৫ মিনিটের জন্য। জেলেনস্কিও এই সাক্ষাৎকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে উল্লেখ করেন।
বৈঠক শেষে টেলিগ্রামে এক পোস্টে জেলেনস্কি লেখেন, ‘ভালো বৈঠক হয়েছে। একান্তে অনেক কিছু আলোচনা করতে পেরেছি। আলোচনার বিষয় থেকে আমরা ফলপ্রসূ কিছু প্রত্যাশা করছি। আলোচনায় উঠে আসা বিষয়ের মধ্যে ছিল- আমাদের জনগণের জীবন রক্ষা, সম্পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি এবং একটি নির্ভরযোগ্য ও স্থায়ী শান্তি যা ভবিষ্যতে যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঠেকাবে।’
জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যখন যুদ্ধ বন্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাচ্ছি পুতিন তখনো ইউক্রেনের বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে যাচ্ছেন। এটা দরকার ছিল না। রোম ছাড়ার আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন পুতিন আমাকে একাই ঠেলে দিচ্ছেন এই যুদ্ধ বন্ধের দিকে। তিনি পুতিনকে বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানান। ট্রাম্পের কণ্ঠস্বরে কিছুটা কড়াভাব ছিল। তিনি এমনও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যে, রাশিয়ার ওপর দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন হতে পারে। ট্রাম্প এমনও মন্তব্য করেছেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে পুতিন যুদ্ধ বন্ধে খুব একটা আগ্রহী না।’
এদিকে রাশিয়ার এফএসবি সিক্রেট সার্ভিস শনিবার বলেছে, মস্কোর বাইরে গাড়িবোমা দিয়ে একজন সিনিয়র জেনারেলকে হত্যার সন্দেহে তারা একজনকে আটক করেছে। শুক্রবারের বিস্ফোরণে জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মোসকালিক নিহত হওয়ার পেছনে রাশিয়া কিয়েভকে অভিযুক্ত করেছে। এফএসবি কর্তৃক প্রকাশিত একটি ভিডিওতে কুজিন নামে পরিচিত এক ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে। তাকে আটক করা হচ্ছে একটি বনের রাস্তায়। বিস্ফোরণ সম্পর্কে কিয়েভ কোনো মন্তব্য করেনি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণোদ্যমে যুদ্ধ শুরু করে রুশবাহিনী। বর্তমানে ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের ২০ শতাংশ মস্কোর দখলে রয়েছে। এর আগে যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে ট্রাম্পও ইউক্রেনের কিছু খনি দাবি করেছিলেন। এবার আর সেসব কথা বলেছেন কি না জানা যায়নি।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে এখন আগ্রহী ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যও। তারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন; কিন্তু পুতিন কি যুদ্ধ বন্ধ করবেন? দখলকৃত ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো কি ছেড়ে দিবেন? চুক্তি সই করার কাছাকাছি কি পৌঁছেছেন তারা এ বিষয়েও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ইউক্রেনে ট্রাম্প আসলে নিজের ভাগ চান। ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের দ্বারপ্রান্তে’ এসব আসলে ফাঁকা বুলি বলেই মনে হচ্ছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে