Views Bangladesh Logo

প্রথম বর্ষপূর্তি সংখ্যা

মানুষের জন্য সাধ্যমতো কাজ করে বিদায় নিতে চাই

মার প্রথম শৈশবের পরিবেশ ছিল এর ঠিক উল্টো। সুস্থ সবল মন নিয়ে বেড়ে ওঠার পক্ষে তা ছিল খুবই অনুকূল। আমি বাড়ির বড় ছেলে। আমার সবচেয়ে বড় বোন-বড় আপা-আমার চেয়ে আট বছরের বড়। তার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন আমার মেজো বোনের জন্ম হয়। বাড়ির সবাই তখন ছেলে-সন্তানের জন্য উন্মুখ। তাই পরপর দুটি মেয়ে হওয়া সবাইকে খুব হতাশ করেছিল। সবচেয়ে বেশি খেপে গিয়েছিলেন বড় আপা নিজে। কেন তার ভাই না হয়ে ফের বোন হলো- এই ক্ষোভে তিনি আমার মেজো বোনের দেড়-দুবছর বয়সের সময় একটা সাইকেলের পাম্পার তার মুখে ঢুকিয়ে পাম্প করতে করতে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন।

এমনি অভিনন্দিত মুহূর্তে পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে আমার ‘আবির্ভাব’। সবার কাছে আমি ছিলাম খুবই আদরের। আমি জন্মেছিলাম সম্পন্ন স্বাস্থ্য নিয়ে, জন্মের পর স্বাস্থ্যে সৌন্দর্যে আরও দৃষ্টিলোভন হয়েছিলাম। যাদের গ্ল্যাক্সো-বেবি বলা হয় আমি ছিলাম তাই। এতটাই আমি মোটাসোটা ছিলাম যে, প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর মেয়ে খালেদা আপা, আমার বড় বোনের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী-আমাকে কোলে পর্যন্ত নিতে পারতেন না। কথাটা বহুবার তিনি আমাকে শুনিয়েছেন। শিশুদের বেশি মোটাসোটা হওয়া যে তাদের স্বাস্থ্যগত বিকাশের জন্য ক্ষতিকর এ তথ্য হাল আমলের বিজ্ঞানীরা বলতে শুরু করেছেন; কিন্তু সেকালে সবাই জানত এর উল্টোটা। সেকালে গ্ল্যাক্সো-বেবি মানেই ছিল সুন্দর, স্বাস্থ্যবান আদরণীয় শিশু। আমি যে গ্ল্যাক্সো-বেবি হয়েছিলাম, তা অকারণে নয়।

বেশি পরিমাণ দুধ খাওয়ার ফলেই আমার ওই হাল হয়েছিল। গড়পরতা শিশুরা দিনে ছয়বার দুধ খায়, প্রতিবার এক বোতল করে। আমি দিনে ছয়বার দুধ খেতাম, প্রতিবার তিন বোতল করে। অর্থাৎ মোট আঠারো বোতল প্রতিদিন। আমার দুধ খাওয়ার আরও একটা শর্ত ছিল। যে বোতলে দুধ খাচ্ছি তা শেষ হবার আগেই পরবর্তী বোতলের নিপল আমার মুখে ঠুসে দিতে হবে। এতে দু-এক সেকেন্ড দেরি হলেও আমি নাকি দৈত্যের মতো কলজে-কাঁপানো শব্দে গর্জন করে উঠতাম। মা তার ছেলেমেয়েদের মধ্যে আমাকে ভালোবাসতেন সবচেয়ে বেশি। সবার তুলনায় বাড়তি আদর-আহ্লাদ তার কাছ থেকে আমি পেয়েছি। জ্বাল-দেয়া ঘন দুধের বাদামি পুরু সর তিনি যে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে খেতে দিতেন, তা আমার এখনো মনে আছে। মোটকথা আমার প্রথম শৈশব কেটেছে একটা সুস্থ প্রাণবন্ত পরিবেশে।

স্কুলের দিনগুলোতেই বুঝেছিলাম যেভাবেই হোক আমার ভেতর নিজের সম্বন্ধে এমন এক তীব্র হীনম্মন্যতাবোধ জন্ম নিয়েছে যার ফলে মানুষের পৃথিবী থেকে পালিয়ে নিজের একান্ত বিবরের ভেতর ককিয়ে ককিয়ে আমি হয়তো একসময় শেষ হয়ে যাব। হয়তো আমার তাই-ই হতো; কিন্তু বাঁচিয়ে দিয়েছিল আমার একটা ব্যাপার: মানুষের জন্য গভীর ভালোবাসা। মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকার আকুতি। সবকিছুর ওপর দিয়ে সেই মৃত্যুবেদনাদীর্ণ আর্তি: ‘মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।’

সেই ছোট্ট ছেলেবেলা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এই আকুতির ধাক্কা নিজের ভেতরে আমি অনুভব করেছি। প্রতিমুহূর্তে টের পেয়েছি আমার চারপাশের মানুষদের আমি যে কেবল ভালোবাসি তাই নয়, তাদের হৃদয়েও আমি বেঁচে থাকতে চাই এবং এই বেঁচে থাকাকে আমার নিয়তির সর্বোচ্চ সম্মান ও দুর্লভতম ঐশ্বর্য বলেও শ্রদ্ধা করি। মানুষের জন্য সাধ্যমতো কাজ করে জীবনের পরিসরেই জীবনকে পুরোপুরি ছাই করে বিদায় নিতে চাই।

কিন্তু জীবনের একেবারে শুরুর সেই অসহায় করুণ দিনগুলোয়, আমার শৈশবে, আমার ভেতর এমন কী ছিল যা নিয়ে সবার সামনে দাঁড়াতে পারি, তাদের হৃদয়ের মধ্যে বাঁচতে পারি? একসময় মনে হয়েছে কিছু না হোক, একটা জিনিস তো অন্তত দিতে পারি তাদের। আমার বিনীত আচরণ, আমার সততা, আমার ভালোবাসা। আমার সরল হৃদয়ের অবোধ অর্থহীন ভালোবাসা। আমার চোখের চেয়ে-দেখা আমার কানের শোনা, আমার হাতের নিপুণ সেবা, আমার আনাগোনা এই ভালোবাসা ও সৌজন্য বিলাতে গিয়েই সেই ছোট শৈশবে মানুষের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। তাদের কাছে গিয়েই অনুভব করেছি আমার চারপাশের মানুষদের ফুলের মতো ফুটন্ত উন্মুখ অনিন্দ্য মুখগুলোই এই পৃথিবীর জ্যোতির্ময়তম দৃশ্য, আমার সবচেয়ে প্রিয় ধর্মগ্রন্থ। সেই থেকে মানুষের জন্য এই টান আমার দিনের-পর-দিন বেড়েছে।

করটিয়ার আর যে কটা স্মৃতি মনের কোণে এখনো উজ্জ্বলভাবে বেঁচে আছে একদিন রাতে-দেখা একটা স্বপ্ন তার একটা। ততদিনে মার কাছ থেকে ‘ঠাকুমার ঝুলি’ বইয়ের ‘শীত বসন্ত’ গল্পটা শোনা হয়ে গেছে। সেই গল্পে সমুদ্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা দুধ-শাদা রঙের গজমোতি হাতি তখন আমার চোখের সামনে গোলাপি স্বপ্নের মতো দাঁড়িয়ে। স্বপ্নে দেখলাম হুবহু সেরকম একটা হাতি এক বিকেলে আমাদের বাসার সামনের মাঠটায় এসে হাজির। বন্ধুদের সঙ্গে খেলা ছেড়ে হাতির দিকে এগিয়ে যেতেই হাতিটা বিনীতভাবে মাটির ওপর বসে আমাকে পিঠে উঠিয়ে আবার চলতে শুরু করে দিল। কার কাছে যেন শুনেছিলাম স্বপ্নে হাতির পিঠে উঠলে মানুষ রাজা হয়। গজমোতি হাতির পিঠে উঠলে তো কথাই নেই। কাজেই হাতির পিঠে বসে রাজত্বের রঙিন সম্ভাবনায় মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠল। আত্মতৃপ্তির সঙ্গে মনে হলো সত্যি সত্যি রাজা হতে যাচ্ছি তাহলে! একবারে সত্যিকারের রাজা।

হঠাৎ দেখি হাতিটা একটা বিশাল প্রাসাদের বারান্দা দিয়ে নিজের মনে হেঁটে চলেছে। প্রাসাদটা নিশ্চুপ, নিঝঝুম। জনমানুষের চিহ্নমাত্র নেই। দরোজা-জানালা সংকিছু বন্ধ। ঠিক যেন একটা ঘুমন্ত পুরী (যেখানে হাতিশালে হাতি ঘুমায়, ঘোড়াশালে ঘোড়া)-রাজা-রানী, পাত্র-মিত্র, পারিষদ, সৈন্য-সামন্ত সবাই সেই ঘুমের জাদুতে বন্দি। বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হাতিটা একসময় পৌঁছল একটা নদীর ধারে। নদীর দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল পাড়ের সঙ্গে বাঁধা একটা জলঞ্চ, বিকেল বেলার ঠাণ্ডা হাওয়ায় তার ওপর দাঁড়িয়ে আব্বা, খুররম খান (সে সময়কার করটিয়ার জমিদার) আর ইব্রাহীম খাঁ গল্প করছেন।

যে ছেলে ভবিষ্যতে রাজা হতে যাচ্ছে তার জন্যে স্বপ্নটার এ পর্যন্ত রীতিমতো উৎসাহব্যঞ্জক, রূপকথার জগতের মধ্যে দিয়ে আচমকা হাতির পিঠের পরিভ্রমণটাও গৌরবজনক; কিন্তু তারপরেই যা ঘটল তা খুবই হতাশাজনক ও রসভঙ্গকারী। রাজকীয় ভঙ্গিতে হাতির পিঠে বসে আমি লঞ্চটার কাছে যেতেই আব্বা হঠাৎ লঞ্চের ওপর থেকে বলে উঠলেন: এই, দে তো নদী থেকে একগ্লাস পানি তুলে। বলে লঞ্চে দাঁড়িয়েই একটা গ্লাস আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। স্বপ্নের রঙিন স্বর্গলোক থেকে যেন নোংরা ডাস্টবিনে পড়ে গেলাম। এতবড় একজন রাজাকে চাক্ষুস সামনে দেখেও আব্বা যে তাকে চিনতে পারলেন না, সে কারণে তার জন্য দুঃখ হলো। সবাই নিশ্চয়ই মানবেন একজন ভবিষ্যৎ রাজাকে এ ধরনের অসম্মানজনক একটা ফরমাশ দিয়ে আব্বা একেবারেই ভালো করেননি। এর প্রতিবাদেই হয়তো, গ্লাস হাতে হাতির পিঠ থেকে নামতে গিয়েই আমার স্বপ্নটা ভেঙে গেল। তখন আমার অল্পবয়স। করটিয়ার বাইরের খুব বেশি জিনিশ আমার দেখা হয়নি। তাই আমার স্বপ্নও সেই অভিজ্ঞতার জগতের খুব একটা বাইরে যেতে পারেনি। অনেক পরে স্বপ্নটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম যে ওই স্বপ্নের ভেতর আমি যা যা সেদিন দেখেছিলাম সবই ছিল আমার চারপাশের পরিচিত জিনিস। স্বপ্নের ভেতর যে হাতিকে দুধ রঙের গজমোতি হাতি বলে মনে হয়েছিল বাস্তবে তা আদৌ দুধরঙা ছিল না।

আসলে ওটা ছিল করটিয়ার জমিদারবাড়ির হাতি। তার গায়ের রঙ আর দশটা হাতির মতোই ছিল খসখসে কালো। আমাদের কলাবাগানে হাতিটা প্রায়ই এসে কলাগাছ খেত বলে যাবার সময় কৃতজ্ঞতা হিসেবে হাতির মাহুত আমাদের হাতির পিঠে তুলে কিছুটা জায়গা ঘুরিয়ে আনত। ওই হাতিটাকেই আমি স্বপ্নের মধ্যে গজমোতির হাতি হিসেবে দেখে রাজা হবার স্বপ্নে উথলে উঠেছিলাম। রূপকথার গজমোতি হাতির গল্প শোনার কারণেই হয়তো অমনটা মনে হয়েছিল। স্বপ্নে যে-জনশূন্য খাঁ-খাঁ রাজপ্রাসাদ দেখেছিলাম সেটাও ছিল আমার চেনা। আসলে তা ছিল করটিয়া কলেজের বিশাল ভবন। গরমের ছুটিতে বন্ধ-থাকা কলেজের ঘুমন্ত জনহীন ছবিটাই স্বপ্নের ভেতরে ওভাবে আমি দেখেছিলাম। আর নদীটা ছিল করটিয়ার হাটের পাশের সেই বড় নদী যা থেকে আমাদের বাসার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদীটা বেরিয়ে এসেছিল। আর রাজা হওয়ার সাধ-যে রূপকথার গল্প শুনে শুনে মনের ভেতর বাসা বেঁধেছিল তাতে আর আশ্চর্য কী! স্বপ্নটার কথা ভাবলে আজ মনে হয় জীবন আমাকে আমার ভবিষ্যৎ-দিনের পরিণতিটাই যেন বলে দিয়েছিল ওই স্বপ্নটার ভেতর দিয়ে অন্তত এটুকু বুঝিয়েছিল পৃথিবীতে যে শিশুটি রাজা হবার জন্যে হাতির পিঠে চড়ে একদিন রওনা হয়েছিল, নদী থেকে গ্লাসে করে পানি তোলার মতো হাস্যকর কাজ করে তাকে জীবন শেষ করতে হবে। করটিয়ার ওই ছোট্ট স্কুলটাতে জীবনের প্রথম মঞ্চে ওঠার সুযোগ পেলেও কীভাবে ওই দুর্লভ সুযোগ থেকে আমি বঞ্চিত হয়েছিলাম সে গল্প বলেই এই স্কুলের পর্ব শেষ করব।

জমজমাট অনুষ্ঠান হবে স্কুলে। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে শেষ হবে সাড়ে ৯টায়। নাচগান-আবৃত্তিতে অংশগ্রহণকারীদের পাশাপাশি আমরাও, সাধারণ ছাত্রেরা, যারা অনুষ্ঠানের কোনো কিছুতে চান্স পাইনি, যাতে অন্তত মঞ্চে ওঠার সুযোগ পাই তার জন্য বুদ্ধি করে একটা জমকালো গানের আয়োজন করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে ওপরের ক্লাসের কিছু ছাত্র মঞ্চের একপাশে দাঁড়িয়ে ব্যান্ডের সঙ্গে 'ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল' গানটি গাইবে আর সেই ঝাঁঝালো ছন্দের সঙ্গে পা মিলিয়ে আমরা 'বাদ-পড়া' ছাত্ররা কুচকাওয়াজ করতে করতে চার সারিতে হেঁটে মঞ্চের একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যাব। ছাত্রদের ওই ভিড়ের ভেতর দর্শকরা কাকে কতটুকু দেখতে পাবে অতশত ব্যাপার নিয়ে মাথা খারাপ করার সময় নেই। ছাত্রদের সবার পরিবারের সদস্যরাই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন, তারা যাবেন। নিজেদের ছেলেটিকে মঞ্চের ওপর দিয়ে যে তারা হেঁটে যেতে দেখবেন ওতেই তারা খুশি। আমার উৎসাহ কিন্তু অন্য কারণে। দর্শকদের চোখের সামনে দিয়ে সংগীতের তালে তালে আমি যে সদর্পে হেঁটে মঞ্চ পার হব, সেই দুর্লভ মুহূর্তটির কথা ভেবেই আমি রোমাঞ্চিত। ঘটনাটা টাঙ্গাইলের করটিয়ার, ১৯৪৫ সালের। অনুষ্ঠানের দিন আমার উদ্দীপনা তুঙ্গে উঠল। উত্তেজনার জোশে দুপুরের নিয়মিত ঘুমটা পর্যন্ত হলো না। অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হলেও আমাদের পর্বটি সবশেষে-রাত ৯টায়। আমি অস্থিরভাবে সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

দর্শকদের সামনে দিয়ে নায়কের দৃপ্ত ভঙ্গিতে মঞ্চের ওপর হেঁটে যাচ্ছি-এই দুর্লভ দৃশ্যের কথা ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে। সবই চলছে ঠিকমতো; কিন্তু দুপুরের ঘুম না-হওয়ায় দেখা দিল আসল গণ্ডগোল। ওটা ছিল আমাদের দৈনন্দিন রুটিন। ঘুমোতে না-চাইলেও মা আমাদের মেরে পিটিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিতেন। এর সঙ্গে আমাদের শরীর এমনই অভ্যস্ত যে দুপুরে কোনো কারণে ঘুম না হলে বিকেল পেরোলেই শরীর ঘুমে এলিয়ে আসে। তবু অনুষ্ঠানের টানটান উত্তেজনায় বিকেল পর্যন্ত সেদিন ভালোই কাটল; কিন্তু পাঁচটা সাড়ে ৫টা বাজতেই টের পেলাম, শরীর ভেঙে চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে। অনুষ্ঠান শুরু হবার কিছুক্ষণের মধ্যেই শরীর পুরো নেতিয়ে এলো; কিন্তু ঘুমিয়ে পড়লে স্টেজে ওঠার সেই অবিশ্বাস্য সুযোগের হবেটা কী! প্রায় জোর করে চোখ খুলে রাখতে চেষ্টা করলাম; কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠছি না। একসময় বুঝলাম বেঞ্চিতেই যেন আর বসে থাকা যাচ্ছে না। উবারকয়েক দুপাশের দুজন অভিভাবকের ওপর ঢলে পড়ায় কিছুক্ষণ তাদের গজর গজর শুনতে হল। কাছেই বাসা। ভাবলাম হাতে সময় অনেক, বাসায় গিয়ে অল্প কিছু ঘুমিয়ে ফিরে আসলেই হবে।

বাসায় ফিরে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে নিচে পা ঝুলিয়ে রাখলাম যাতে পুরোপুরি না ঘুমিয়ে পড়ি। শোবার আগে মাকে বললাম, রাত সোয়া ৮টার আগে অবশ্যই যেন ডেকে দেন। মা মাথা নেড়ে নিশ্চিত আশ্বাস দিলেন। আমার শরীর একেবারেই এলিয়ে পড়েছিল। শোয়ামাত্র গভীর ঘুমে ডুবে গেলাম। কিসের শব্দে ধড়মড় করে ঘুম থেকে উঠেই দেখি চারধার সুনসান। অনেক আগেই রাত দশটা পেরিয়ে গেছে। অর্থাৎ দর্শক-সম্প্রদায়ের সামনে দিয়ে মঞ্চ হেঁটে পার হবার সেই দুর্লভ সুযোগ অনেকক্ষণ আগেই হাতছাড়া হয়েছে। দুঃখে অভিমানে বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠল। কল্পনায় চোখের সামনে সমবেত কণ্ঠে ‘চল চল চল’ গানটির সঙ্গে ছাত্রদের কুচকাওয়াজ করে মঞ্চ পার হওয়ার বর্ণাঢ্য দৃশ্যটি দেখতে পেলাম যেখানে আর সবাই আছে কেবল আমি নেই।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ