যৌতুকের শিকলে বন্দী কালীগঞ্জের গৃহবধূ তানিয়া
আট বছর আগে মেয়ে তানিয়াকে বিয়ে দিয়েছেন হতদরিদ্র বাবা রিপন গাজী। নির্যাতনের মুখে যৌতুক হিসেবে তিন দফায় জামাই সোহেল রানাকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। এরপরও টাকার দাবিতে মেয়ের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছিলেন জামাইসহ তার পরিবারের লোকজন। সর্বশেষ দুদিন ধরে তানিয়াকে পায়ে শিকল বেঁধে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। খবর পেয়ে বাবা রিপন গাজী গিয়ে মেয়ের পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় দেখেন। এমনটি করার কারণ জানতে চাইলে তাকেও মারধর করে আটকে রাখেন জামাই সোহেল।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবা-মেয়েকে উদ্ধার করেছে। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বাদেডিহী গ্রামে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে তানিয়ার বাবা রিপন গাজী কালীগঞ্জ থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। রাতেই পুলিশ তানিয়ার শাশুড়ি মাহমুদা খাতুন ও ননদ রুমি খাতুনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে, এখনো গ্রেপ্তার হননি মামলার প্রধান আসামি স্বামী সোহেল রানা।
এমন যৌতুকলোভী স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনদের শাস্তি চেয়েছেন রিপন গাজী ও নির্যাতিত গৃহবধূ তানিয়া খাতুন।
তানিয়া খাতুন বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্বামীসহ পরিবারের লোকজন আমার ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। বাবা গরিব হলেও আমার সুখের জন্য কয়েক দফায় টাকা দিয়েছেন। তারপরও টাকার জন্য নির্যাতন বন্ধ করেননি তারা। সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে শাশুড়ি, স্বামী ও ননদ মিলে আমাকে মারপিটের পর পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে তালাবদ্ধ অবস্থায় আটকে রাখেন। খবর শুনে আমার বাবা এসে নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে তাকেও মারধর করেন। থানায় জানানো হলে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।’
রিপন গাজী বলেন, ‘তানিয়ার দুই মেয়ের ছোটটি মাত্র তিন মাসের। এ অবস্থায়ও মেয়ের ওপরে যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালাচ্ছিলেন যৌতুকলোভী জামাই সোহেল ও তার পরিবারের লোকজন। বেশ কিছু টাকা দিলেও তাদের আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সোমবার সকালে তানিয়াকে আবারও টাকা আনতে বলেন তারা। এতে সে রাজি না হওয়ায় মারপিট করে পায়ে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ ঘরে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে পরদিন সকালে জামাইবাড়ি গেলে আমাকেও মারধর করেন তারা। পুলিশ আসায় আমরা রক্ষা পেয়েছি।’
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, গৃহবধূ তানিয়াকে পায়ে শিকল বাঁধা ও তার বাবা রিপন গাজীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নির্যাতিতার বাবার মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে