‘সকল নারী সূর্যের মত জ্বলে উঠছে আপন সত্ত্বায়’
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিবেচনায় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সব প্রাকৃতিক দুর্যোগই সাময়িক অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্য মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কষ্ট ও জীবন সংগ্রামের বিষয়ে আমরা সবাই অবগত।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু সংকটের কারণে স্থানচ্যুত হওয়া মানুষের ৮০ শতাংশই নারী। সংঘাত ও সংকট যেমন- কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে বা পানির অভাব ও ফসলহানির প্রভাবে গণ অভিবাসনের সময় অভিবাসনের যাত্রাপথ ও শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন জায়গায় নারী ও মেয়েরা জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকেন। এই ঝুঁকি থেকে বের হয়ে আসতে রবিবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব এবং এর ঝুঁকি সম্পর্কে বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নারী মৈত্রীর আয়োজনে অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন নারী মৈত্রীর সভানেত্রী (প্রেসিডেন্ট) মাসুমা আলম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারী সংসদ সদস্য এবং মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের-৩ সাংসদ এবং সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ শবনম জাহান শিলা এমপি, মো. সাইদুর রহমান, মহাপরিচালক, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, খাদিজা মরিয়ম নারী উদ্যোক্তা সেলের প্রধান, এসএমই ব্যাংকিং বিভাগ, ব্র্যাক ব্যাংক এবং মোঃ নাজিম হাসান সাত্তার, মহাব্যবস্থাপক, এসএমই ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, ‘নারী মৈত্রী দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে যত কাজ করে, তার মধ্যে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা এবং তা সমাধানের মাধ্যমে তাঁদের এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য কাজ করছি।’
সরকারের নীতি সহায়তা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে নারী উদ্যোক্তা তৈরি ও উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তারপরও নারীর চলার পথ এখনো বাধাহীন না। নারী চাইলেই স্বাচ্ছন্দ্যে তার ব্যবসায়িক কাজ করতে পারেন না। তাদের জন্য একটা সহায়ক পরিবেশ দরকার। তাই নারী মৈত্রী বিশ্বাস করে সূদুর ভবিষ্যতে নারী নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান তৈরিতে যেমন ভূমিকা রাখতে পারবে ঠিক তেমনি নারী উদ্যোক্তাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আরও জোরাল হতে সহায়তা করবে বলে জানান নারী মৈত্রীর সভানেত্রী মাসুমা আলম।
তৃণমূল পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তা রিনা আকতার বলেন, ‘আমার খারাপ সময়ে আমার পাশে ছিলেন নারী মৈত্রী। আমি অনেক কিছু জানতাম না, বুঝতাম না, এমন সময় নারী মৈত্রীর আপারা আমাকে সহায়তা করেন এবং বর্তমানে আমি একজন সফল উদ্যোক্তা। আমি চাই আমি এখন থেকে তাদের পাশে থাকব, যারা এখনো পিছিয়ে আছে। আমি তাদের সাহস হয়ে তাদের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত করতে সবসময় তাদের পাশে থাকতে চাই।’
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘আজকের নারীরা থেমে নেই। সকল নারী সূর্যের মতো জ্বলে উঠছে আপন সত্ত্বায়। জীবনে এগিয়ে যেতে সকলকে কাজ করতে হয়, জীবনের নানান বাস্তবতার সম্মুখীন সকলকে হতে হয়। বাধা যেমন আসবে সেই বাধা থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য রয়েছে সমাধান। থমকে যাওয়া যাবে না, সে জন্যও আমাদের যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।’
এ ছাড়াও শহরে নারীর পাশাপাশি গ্রামীণ নারী যাতে কোনোভাবেই পিছিয়ে না থাকে সে দিকও নজর দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে