Views Bangladesh Logo

বুকার পুরস্কার-২০২৫ প্রাপ্ত বানু মোস্তাকের সাক্ষাৎকার

নারীর দুঃখই আমার লেখার শক্তি

Banu  Mushtaq

বানু মুশতাকএর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার

‘যদি তুমি এই বিশ্বকে আবার সৃষ্টি করো, পুরুষ এবং নারীকে পুনরায় গড়ে তোলো, তবে অনভিজ্ঞ কুমারের মতো আচরণ করো না। পৃথিবীতে নারী রূপে অবতীর্ণ হও, প্রভু! একবার নারী হও, হে প্রভু!’

নারীর গভীর বেদনা অনুভব করে উপরের কথাগুলো লিখেছেন এবারের বুকার পুরস্কার বিজয়ী কথাশিল্পী বানু মুশতাক। বানু মুশতাক একজন ভারতীয় লেখক, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। ১৯৪৮ সালে কর্ণাটকের একটি ছোট শহরে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি। ৭৭ বছর বয়সী বানু মুশতাক কান্নাড়া ভাষায় লেখালেখি করেন। ছোটগল্পের সংকলন ‘হার্ট ল্যাম্প’-এর জন্য বুকার পুস্কার-২০২৫ অর্জন করেছেন তিনি। কান্নাড়া ভাষায় লেখকদের মধ্যে তিনিই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি পেলেন।

বানু মুশতাকের ছোটগল্পের সংকলন কান্নাড়া ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন দীপা ভাস্তি। ‘হার্ট ল্যাম্প’-এ ১২টি গল্প সংকলিত হয়েছে, যেগুলো ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। গল্পগুলোতে দক্ষিণ ভারতের মুসলিম সমাজের দৈনন্দিন জীবনের চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা-অনুভূতির গল্প প্রাধান্য পেয়েছে। পুরস্কার পাওয়ার পর দ্য বুকার প্রাইজ ডট কমকে দেয়া ছোট সাক্ষাৎকারটি ভিউজ বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।

হার্ট ল্যাম্প লেখার পেছনে আমার অনুপ্রেরণা, কীভাবে আমি এটা লিখেছিলাম
আমার গল্পগুলো নারীদের নিয়ে। ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতি কীভাবে তাদের ওপর অমানবিক নিষ্ঠুরতা চাপিয়ে দেয়, তাদের কেবল অধস্তনে পরিণত করে এবং প্রশ্নহীন আনুগত্যে বাধ্য করে সেসব নিয়েই আমার গল্প। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিদিনের ঘটনাগুলো থেকেই আমি গল্প সংগ্রহ করেছি, তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা। নারীর কষ্ট-যন্ত্রণা-অসহায়ত্ব আমার ভেতরে গভীর অনুভূতির জন্ম দেয়, এসবই আমাকে লিখতে বাধ্য করে।

হার্ট ল্যাম্পে প্রকাশিত গল্পগুলো আমার ৫০টি গল্প থেকে বাছাইকৃত যা ১৯৯০ সাল থেকে আমি লিখেছিলাম। ইতোপূর্বে ৬টি গল্পগ্রন্থে সেগুলো প্রকাশিত হয়েছিল। বেশিরভাগ গল্পই প্রথম খসড়ার, বইয়ে দিতে গিয়ে দ্বিতীয়বার দেখেছি; কিন্তু কোনো বিস্তৃত গবেষণা আমি করিনি। আমার হৃদয়ই গবেষণার মাঠ। যে ঘটনা যত তীব্রভাবে আমাকে স্পর্শ করেছে, তত গভীরভাবে তত আবেগ দিয়ে আমি গল্পগুলো লিখেছি।

যে বইটি আমাকে বইয়ের প্রেমে ফেলে
একটি বইয়ের পরিবর্তে আমি অনেক বইয়ের নাম বলব। অনেক বই দ্বারাই আমি প্রভাবিত। সেই ছোট্টবেলায় যখন বর্ণমালা লিখতে শিখেছিলাম, তারপর থেকেই আমি লিখছি।

যে বইটি আমাকে লেখক বানায়
১৯৭০-এর দশক ছিল কর্ণাটকে আন্দোলনের দশক। দলিত আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, নারী সংগ্রাম, পরিবেশগত আন্দোলন, থিয়েটার, এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড আমার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। প্রান্তিক সম্প্রদায় মানুষদের সঙ্গে, নারী এবং অবহেলিতদের মানুষের সঙ্গে আমার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। তাদের সমস্ত অভিব্যক্তিই আমাকে লেখার শক্তি জুগিয়েছিল। সামগ্রিকভাবে কর্ণাটকের সামাজিক পরিস্থিতি আমার লেখক সত্তার জন্ম দিয়েছিল।

যে বইটি পৃথিবী সম্পর্কে আমার চিন্তাভাবনা বদলে দেয়
কোনো একক বই আমার জীবন এবং লেখালেখির ওপর প্রভাব ফেলেনি। বরং অসংখ্য বই এবং অভিজ্ঞতা আমার জীবনে প্রভাব ফেলেছে। আমার জীবনকে এক নতুন অনুভূতি দিয়েছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ