নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশ
অবাক করা বিষয় হলেও সত্য যে, ক্রিকেট বিশ্বকাপে পুরুষদেরও আগে যাত্রা শুরু হয়েছিল নারীদের। ১৯৭৫ সালে পুরুষদের প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর দুই বছর আগেই বিশ্বকাপ খেলেছে নারীরা। ১৯৭৩ সালের সেই বিশ্বকাপে শিরোপা জেতে ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবশ্য পুরুষদের পর খেলে নারীরা। ২০০৭ সালে পুরুষরা খেললেও নারীরা তাদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছে ২০০৯ সালে। তবে বাংলাদেশের মেয়েরা বিশ্বকাপে খেলে আরও পরে, ২০১৪ সালে।
২০১৪ সালে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ পায় বাংলাদেশ। সেবার স্বাগতিক ছিল বাংলাদেশ, সব ম্যাচই অনুষ্ঠিত সিলেটে। একই সময়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় পুরুষদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। প্রথম আসরটা খুব একটা খারাপ যায়নি বাংলাদেশের। মোট পাঁচ ম্যাচ খেলে জিতেছে ২টিতে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল। পরে নবম স্থানের প্লে-অফে আয়ারল্যান্ডকেও হারায়। আইরিশদের বিপক্ষে ১৭ রানের এই জয়ের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আর কোনো জয়ের মুখ দেখতে পারেনি বাঘিনীরা। ২০১৬, ২০১৮, ২০২০ ও ২০২৩ সালে খেলেও কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি তারা।
২০১৮ সালে ৪ ম্যাচেই শোচনীয়ভাবে হারে বাংলাদেশ। তিনটি ম্যাচেই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন বর্তমান অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। ২০২০ সালের বিশ্বকাপটা ছিল চরম হতাশার। কোনো ম্যাচ জেতা তো দূরের কথা কোনো ম্যাচে ১০০ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ।আগামী ৩ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর। এবারের আসরটি বাংলাদেশের মাটিতে বসার কথা ছিল। তবে নিরাপত্তার অজুহাতে বিশ্বকাপটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দেশটির দুবাই এবং শারজাহর দুই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টের ২৩টি ম্যাচ। এবারের বিশ্বকাপে খেলছে মোট ১০টি দল। ‘এ’ ও, ‘বি’ গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলছে দলগুলো। বাংলাদেশ রয়েছে ‘বি’ গ্রুপে। সেখানে বাংলাদেশের চার প্রতিপক্ষ হলো- স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অন্যদিকে গ্রুপ ‘এ’তে রয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড: নিগার সুলতানা জ্যোতি, মারুফা আক্তার, দিপা বিশ্বাস, সাথী রানী, মুরশিদা খাতুন, স্বর্ণা আক্তার, রিতু মণি, নাহিদা আক্তার, সুলতানা খাতুন, সুবহানা মোস্তারি, ফাহিমা খাতুন, জাহানারা আলম, দিলারা আক্তার, তাজ নাহার ও রাবেয়া খান।
প্রস্তুতি কেমন:
বিশ্বকাপ শুরুর আগে দেশের মাটিতে ঘাম ঝরিয়েছে বাংলাদেশ। এরপর দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। প্রথম ম্যাচে দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমি মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে ৩৩ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। একই ভেন্যুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩ রানে জিতেছে নিগার সুলতানার দল। এশিয়ার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে গেলেই পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টি আত্মবিশ্বাস জোগাবে বাংলাদেশের।
লক্ষ্য:
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক দশক ধরে জয় না পাওয়া বাংলাদেশের প্রাথমিক লক্ষ্য একটি জয়। পরে ভাববে সেমিফাইনাল নিয়েও। দেশ ছাড়ার আগে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি বলেন, ‘বিশ্বকাপে লক্ষ্য অবশ্যই ম্যাচ জেতা। ২০১৪ সাল ছাড়া বিশ্বকাপে আমরা আর কখনো কোনো ম্যাচ জিততে পারিনি। ভালো ক্রিকেট খেলেছি; কিন্তু জিততে না পারলে সেটার কোনো মানে নেই। প্রথম তাই লক্ষ্য থাকবে ম্যাচ জেতা। দ্বিতীয়ত, সেমি-ফাইনাল কে না খেলতে চায়! আমাদেরও লক্ষ্য থাকবে তেমন কিছু করা। আমরা জানি যে, আমাদের ক্রিকেট যদি এক ধাপ এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে বিশ্বকাপের চেয়ে বড় জায়গা আর হতে পারে না।’
দলের পেসার জাহানারা আলম বলেনে, ‘এটা নিয়ে আমরা ষষ্ঠ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলব। আমি গর্বিত সদস্য যে, সবগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। ২০১৪ বিশ্বকাপে ঘরের মাটিতে আমরা শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছিলাম, সৌভাগ্য হয়েছিল। আমার বিশ্বাস, এবারের বিশ্বকাপটা আমাদের জন্য একটু কঠিন। আমাদের গ্রুপে এশিয়ার কোনো দল নেই। সেদিক থেকে অবশ্যই কঠিন। তবে কিছুই অসম্ভব নয়। আমরা যদি ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের মতো দলগত পারফরম্যান্স করতে পারি, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।’
কোচ হাসান তিলকারত্নে বলেছেন, “আমাদের প্রস্তুতি ভালো। ব্যাটিং আমাদের দুশ্চিন্তার জায়গা। যদিও আমরা শ্রীলঙ্কায় ‘এ’ দলের সফরে ইতিবাচক কিছু পেয়েছি। আমরা বেশ আত্মবিশ্বাসী। আমি নিশ্চিত করে বলছি তারা আমাদের হয়ে ম্যাচ জেতাবে।”
ফেভারিট কারা:
পুরুষ বা নারী সব ক্রিকেটেই অস্ট্রেলিয়া যেন একছত্র অধিপতি। ফরমেট যা-ই হোক, অস্ট্রেলিয়ার রাজত্ব চলে। নারীদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও এর ব্যতিক্রম নয়। এ পর্যন্ত ৮ বার নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ৬ বারই শিরোপা ঘরে তুলেছে অস্ট্রেলিয়া নারী দল। একবার রানারআপও হয়েছে। এবারও দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপে গেছে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা দলটি। তাই এবারও হট ফেভারিটের তালিকায় রয়েছে অজি নারী দল।
ফেভারিটের তালিকায় রয়েছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডও। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার পর ভারতকেও সবচেয়ে বেশি ফেভারিট ভাবছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অবশ্য তাকিয়ে থাকবে জ্যোতিদের দিকে। সাম্প্রতিক সময়ে যে ফর্ম তা ধরে রাখতে পারলে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনেই স্কটিশদের হারিয়ে দীর্ঘ এক দশকের খরা কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে