Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

কার্বন নিঃসরণ কমাতে রিকশাচালকদের ভূমিকার কি মূল্যায়ন হবে না

Mamun–Or–Rashid

মামুন–অর–রশিদ

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

প্রতি কিলোমিটার গাড়ির চাকা ঘুরলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে ১৬২ দশমিক ১ গ্রাম; কিন্তু রিকশার চাকা ঘুরলে কোনো ধরনের কার্বন নিঃসরণ হয় না। আমাদের এই শহর ঢাকার অলি-গলিতে প্রায় ১২ লাখ রিকশা চলে। প্রতিদিন এসব বাহনের চালক ঠিক কত কিলোমিটার চাকা ঘোরায় তা বলা মুশকিল। তবে যদি এই ঢাকায় রিকশা না থাকত, তাহলে পেট্রোল পোড়ালে কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরিত হতো তা সহজেই অনুমান করা যায়; কিন্তু কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য রিকশাচালকদের কোনো প্রণোদনা কি দেয়া হয়? হয় না; কিন্তু কেন?

গল্পের শুরুটা এখান থেকেই করি, রাজধানীর ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে কিছু মানুষ একটি ভালো কাজের হোটেল খুলেছেন। দুপুরে এখানে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ানো হয়। রিকশাচালক, ছিন্নমূল মানুষ কিংবা আরও অনেকে এখানে সেই খাবার খান। একদিন দুপুরের দিকে আমি ওই স্থান থেকে রিকশায় উঠেছিলাম। রিকশাচালককে বললাম, দুপুরে খেয়েছেন। বললেন, না। এখানে খেয়ে নিতে পারতেন তো। রিকশাচালক বললেন, মামা, এখানে খাইতে ভালো লাগে না। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন? রিকশাচালক বললেন, খোলা জায়গায় খাওয়ায়। খাওয়ার সময় রাস্তার লোকজন তাকিয়ে থাকে। বিষয়টি আমার ভালো লাগে না।

চিন্তা করুন একজন রিকশাচালকের আত্মসম্মানও কতটা শ্রদ্ধা জাগানিয়া। নিজের সম্মান বজায় রাখতে পারেন মানুষটি। আমার মাথায় চিন্তা এলো, আচ্ছা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) যদি বৃক্ষরোপণ করে ক্লাইমেট ফান্ডের টাকা পায়, তাহলে রিকশাচালক কেন পাবেন না? সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করলে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে যদি কার্বন ক্রেডিট করে টাকা পাওয়া যায়, তাহলে রিকশাচালকরা নয় কেন? না কি অশিক্ষিত এবং অসংগঠিত মানুষ বলে ওদের পক্ষে কথা বলার লোক নেই, তাই তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কেউ এসব নিয়ে কথাও বলে না। কারণ এতে কারও লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই।

কিন্তু সরকার তো দাতা ও বিদেশি নানা সংস্থার কাছ থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য অর্থ পাচ্ছে। সেই অর্থে তো রিকশাচালকদের অংশীদার হওয়া উচিত। কারণ এই শহরে তারাই নিজের পেশি ক্ষয় করে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। যদিও তাদের অবদানের কথা কেউ স্বীকার করে না। উল্টো এই শহরের যানজটের মূল কারণ হিসেবে তাদের চিহ্নিত করা হয়। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোনো কোনো সড়ককে ভিআইপি রাস্তা উল্লেখ করে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর তাজউদ্দীন আহমদ সাইকেলে চড়ে মন্ত্রণালয়ে যেতেন। এখন এ আশা না করা গেলেও সাইকেল চালকদের জন্য রাস্তায় একটা পৃথক লেন থাকতে পারত। সাইকেল আর সাইকেলসহ রিকশার জন্য। সেসবের কিছু নেই।

পশ্চিমারা কার্বন সিঃসরণ কমাতে সাইকেল চালাচ্ছে। আমাদের দেশের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কাঠের সাইকেল বানিয়েও ইউরোপে বিক্রি করছেন। অল্প দূরত্বের রাস্তায় তারা সাইকেল ব্যবহার করছেন। আমাদের রাস্তা এমন নয় যে, আমরা চাইলেই সবাই সাইকেল চালাতে পারব; কিন্তু আমাদের যে রিকশা চলছে আর তারা যে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ভূমিকা রাখছে, তাদের পাওনাটা তাহলে কে কীভাবে বুঝিয়ে দেবে।

আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন উপবৃত্তি দেয়া হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট সময় পরপর টাকা পাঠানো হয়। তাহলে রিকশাচালকদের নামে কেন এমন নিবন্ধন করা যাবে না? এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে, একজন রিকশাচালক তো আর সব সময় রিকশা চালাবেন না। এরও একটা সহজ সমাধান আছে। এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সবার অবস্থান নিশ্চিত করা যায়। সঙ্গত কারণে একজন রিকশাচালক প্রতিদিন রিকশা চালাচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া খুব কঠিন বিষয় না।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই টাকা আসবে কীভাবে? বিশ্বের ধনী দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য টাকা দেয়। আবার বড় বড় কোম্পানি যারা বেশি কার্বন নিঃসরণ করে তারাও এখাতে বিনিয়োগ করে। রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশের রিকশাচালকদের অবদান তুলে ধরে আবেদন করতে পারেন। তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান অর্থ পেলে সেখান থেকে রিকশাচালকরা অর্থ পেতে পারেন।

অন্যদিকে সরকার আমাদের দেশের গাড়ির ওপর কর নিয়ে থাকে। এই করের অর্থের ভাগ দিতে পারেন। কারণ যারা গাড়ি কেনেন তারা রাস্তা ব্যবহার করেন, কার্বন নিঃসরণ করেন এমন নানা কারণে অতিরিক্ত কর দেন। তাহলে যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কার্বন নিঃসরণ কমাতে ভূমিকা রাখছে, তিনি বা সেই প্রতিষ্ঠান কেন এর অংশীদার হবে না! বাংলাদেশের গাড়ির বাজারে আরও দুটি জনপ্রিয় ব্রান্ড হচ্ছে কোরিয়ার হুন্দাই-কিয়া। এই দুটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দুটি যৌথভাবে ৫২ লাখ টন স্টিল ব্যবহার করেছে। ফলে তাদের কাছেও আমরা এই আবেদনটি করতে পারি। আমাদের দেশে এসে আবার গাড়িগুলো জ্বালানি পুড়িয়ে আরও এক দফা কার্বন নিঃসরণ করছে তাই আমরা তাদের কাছে জোরালোভাবে এই আবেদন করতেই পারি।

দেশে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ট্রাস্টটি কার্বন নিঃসরণ কমাতে যারা ভূমিকা রাখছে, তাদের অর্থায়ন করছে; কিন্তু তারাও এই রিকশাচালকদের এত বড় ভূমিকার কোনো দিন প্রসংশাই করেনি। টাকা দেয়া তো অনেক দূরের কথা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ