Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ফ্রি ভিসায় শ্রমিকদের অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়া যাবে না

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বেশির ভাগ শ্রমিকই বিদেশে যাচ্ছেন ঋণ নিয়ে, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে। যাবার আগেই তারা সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমি বন্ধক, শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করেই যেতে বাধ্য হচ্ছেন; কিন্তু নানা কারণে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন খালি হাতে। এমন খবর আমাদের দেশের জন্য সুখকর নয়।

বিদেশে গিয়ে কোনো নির্দিষ্ট কাজ জোগাড়ের নিশ্চয়তাটুকুও অনেক শ্রমিকের নেই। কারণ তারা যাচ্ছেন ফ্রি ভিসায়। ফ্রি ভিসা কী এটা আর জানার বাকি নেই বাংলাদেশের মানুষের। নব্বই দশকের গোড়া থেকেই ফ্রি ভিসা শব্দটি দেশ-গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে উচ্চারিত হতে থাকে। তখন ফ্রি ভিসাই ছিল স্বপ্নের মতো একটি ব্যাপার। পরিচিত লোক মারফত (দালাল) অনেকেই তখন সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতেন।

সত্যি বলতে, তখন তারা অনেকে পরিবারের অবস্থা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলের সমৃদ্ধির পেছনে একটা বড় অংশ এসেছে এসব প্রবাসী আয় থেকে; কিন্তু গত এক-দেড় দশকে পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও শ্রমমূল্য কমে গেছে। পেশাগত দিকেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। ফলে আগের মতো আর অধিকসংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে; কিন্তু বাংলাদেশি শ্রমিক যাওয়া বিরাম নেই। যেসব শ্রমিক এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই যাচ্ছেন ফ্রি ভিসায়। আর ফ্রি ভিসায় যাওয়া মানে অনেকটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

গতকাল শনিবার (২৭ এপ্রিল) সাংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়, প্রতি বছর লাখ লাখ শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের উদ্দেশ্যে গিয়ে পরে নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন খালি হাতে। যে কাজের কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই প্রবাসে গিয়ে তারা সেই কাজই করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে শিকার হচ্ছেন মারাত্মক দুর্ঘটনার। দুর্ঘটনায় আহত হলে চিকিৎসারও ব্যবস্থা নেই। বেতন তো নেই-ই। তা ছাড়া আইনি হয়রানও আছে অনেক। ফলে খালি হাতে দেশে ফিরা ছাড়া তাদের আর উপায় থাকে না। শূন্য হাতে পরিবারের কাছে ফিরে আসার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয় বলে মনে করেন তারা। ফিরে আসার পর শুরু হয় ঋণের চাপ।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতি বছর যত জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে, তার ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশই যায় ফ্রি ভিসায়। এই যাওয়ার ক্ষেত্রে আবার অর্থের বিনিময়ে তাদের কাগজপত্র করে দিচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো; কিন্তু এজেন্সিগুলো এর পুরো দায় নিতে নারাজ। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) এর মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শ্রমকিদের ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার একক কোনো কারণ নেই।

জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশে অনেক কথা হয়। অথচ শ্রমিকদের এরকম শূন্য হাতে ফিরে আসা নিয়ে ততটা আলোচনা নেই। গেল সপ্তাহেই কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এসেছিলেন বাংলাদেশে। তখন আবারও জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। বাংলাদেশ ও কাতারের সম্পর্কে বড় একটি ক্ষেত্র জনশক্তি রপ্তানি। বাংলাদেশের জনশক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এ মুহূর্তে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কাজ করেন।

কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের সময় স্টেডিয়ামসহ অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শ্রমিক অবদান রেখেছেন। তবে অন্য অনেক দেশের মতো কাতারও এখন দক্ষ শ্রমিক চায় বাংলাদেশ থেকে। কাতার এখন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশলসহ নানা ক্ষেত্রের দক্ষ লোকজনকে কাজে নিতে চায়। তবে অল্প দক্ষ শ্রমিকদেরও যেন নেওয়া হয়, সেই অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। কাতার এতে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।

সরকারি মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানি হলে শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কাজ পাওয়ার নিশ্চিয়তা থাকে। অনেক আইনি জটিলতা থেকেও শ্রমিকরা বেঁচে যান। সে ক্ষেত্রে আর দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর দ্বারস্থ হতে হয় না। জনশক্তি রপ্তানিতে সরকার আরও সচেতন ভূমিকা রাখবেন এটাই আমাদের কাম্য। পাশাপাশি কাতারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছেন, কেন এবং কীভাবেই বা তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এসব নিয়ে নীতিনির্ধারকদের আরও ভাবতে হবে। শ্রমিকদের এমন অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়া যাবে না। আমাদের স্মরণে রাখতে হবে, বাংলাদেশের উন্নয়নের পেছনে প্রবাসী শ্রমিকের অবদান সীমাহীন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ