পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপূজায় পদ্মার ইলিশ থাকবে তো?
শরতের মেঘ জানান দিচ্ছে পূজার আর বেশি বাকি নেই। আসছে অক্টোবরে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে অনুষ্ঠিত হবে বছরের বৃহত্তম উৎসব দুর্গাপূজা। এই আয়োজনে ‘বিভেদ’ ভুলে সবাই মাতবেন আনন্দ-উৎসবে। প্রতি বছর কলকাতার বাঙালি হিন্দুদের এই উৎসবে বাড়তি আমেজ যোগ করে বাংলাদেশ থেকে আসা পদ্মার ইলিশ। তবে এ বছর দুর্গাপূজায় পর্যাপ্ত ইলিশ না থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, পূজায় ইলিশ থাকবে তো?
এই প্রশ্ন ওঠার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, বছরের বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানি করেন। দুর্গাপূজার সময় এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় উল্লেখযোগ্য হারে। তবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। এই কারণেই পদ্মার ইলিশ ভারতে আসবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পদ্মার ইলিশ আসে প্রায় ৪ হাজার ৬০০ টন। ২০২২ সালে আসে প্রায় ৩ হাজার টন এবং ২০২৩ সালে এসেছিল প্রায় ৪ হাজার টন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মাছ ব্যবসায়ীরা কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। ফলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির পূজার উৎসবে ইলিশের অপেক্ষায় থাকলেও ব্যবসায়ীরা দিতে পারবেন কি না, তার উত্তর মিলছে না।
কলকাতার বাঙালিরা জানান, দুর্গাপূজার সময় পদ্মার ইলিশ মাছ দিয়ে মধ্যাহ্নভোজের অন্যরকম আনন্দ রয়েছে, যা ভোজনে আনে ভিন্ন মাত্রা। এ জন্য পূজা শুরুর আগে থেকেই এপার বাংলার মানুষ অপেক্ষা করেন রুপালি ইলিশের, যা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে; কিন্তু এবার সেই রেওয়াজে ছেদ পড়তে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এখন অনেকাংশে স্থির হলেও দেশটির রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের মাছ ব্যবসায়ীরা।
কলকাতাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, এই বছর এ পাড়ে ইলিশ আসার সম্ভাবনা কম। সামান্য কিছু চোরাইপথে আসতে পারে।
পদ্মার ইলিশ না পাওয়া গেলেও গঙ্গার ইলিশে ভরসা করছেন কোনো কোনো মৎস্যজীবী। এই বছর ডায়মন্ডহারবার থেকে অন্যবারের তুলনায় বেশি ইলিশ ওঠায় এই ভরসা তাদের। দিঘা থেকেও রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ মিলেছে বলে জানা গেছে।
কলকাতার যদু বাবুর বাজার সংলগ্ন অঞ্চলের মাছ বিক্রেতা রমেশ হাজরা বলেন, "বাজারে ইলিশের ঘাটতি নেই। তবে খরিদদাররা পদ্মার ইলিশ বেশি খুঁজছেন। বাংলাদেশ থেকে তো পদ্মার ইলিশ আসছে না, তাহলে আমরা কোথা থেকে দেব।"
গঙ্গার ইলিশ বেশি ওঠায় এবার অনেক কম দামেই পাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে পদ্মার ইলিশের চাহিদা গঙ্গার ইলিশ মেটাতে পারছে না।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরভাগের শহর শিলিগুড়ির মৎস্য ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক বাপি চৌধুরী বলেন, "আমরা বাংলাদেশের ইলিশ মাছ আনতে চাই বলে যোগাযোগ করেছি; কিন্তু এখন বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি তাতে আর ওই দেশের মাছ আনা সম্ভব নয়। ক্রেতাদের কাছে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।"
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ বেশ কয়েকটি কারণে ইলিশ আমদানির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলেই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পদ্মার ইলিশ মাছের অপরিসীম সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে বলেও স্বীকার করছেন তারা।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এর আগে বলেছেন, আগে বাংলাদেশের মানুষ ইলিশ পাবে। এরপরেই রপ্তানি হবে। তার এই বক্তব্যের পর পদ্মার ইলিশ পাওয়া নিয়ে আরও সংশয় দেখা দিয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে