Views Bangladesh Logo

ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন তরুণরাই : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া এক তথ্যে জানা গেছে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন তরুণরা। চলতি বছরের এক জরিপে উঠে এসেছে যাদের বয়স ২১-২৫ এর মধ্যে তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গুজ্বরে।

জানা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে ১৫ হাজার ১১০ জনের বয়স ২১-২৫ বছর, ১৪ হাজার ৬৩ জনের বয়স ২৬-৩০ এর মধ্যে আর ১৩ হাজার ১৩৫ জনের আক্রান্তের বয়স ১৬-২০ এর মধ্যে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সারা দেশে মশাবাহিত ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৭৫ জন। এছাড়াও এই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪০ জন। এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু ২০২৩ সালে ১ হাজার ৭০৫ জন এবং রোগী ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।

২০২৪ সালের মাসভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুরোগী ৩০ হাজার ৮৭৯ জন শনাক্ত হয়েছে অক্টোবর মাসে। এছাড়া জানুয়ারিতে ১ হাজার ৫৫, ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৯, মার্চে ৩১১, এপ্রিলে ৫০৪, মে মাসে ৬৪৪, জুনে ৭৯৮, জুলাইয়ে ২ হাজার ৬৬৯, আগস্টে ৬ হাজার ৫২১, সেপ্টেম্বরে ১৮ হাজার ৯৭, নভেম্বরে ২৯ হাজার ৬৫২ এবং ডিসেম্বরে শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৭৪৫ জন।

এদিকে, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১ জন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ২ হাজার ৯৭২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২ হাজার ৭০৮ জন।

বিশিষ্ট চিকিৎসক ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রবীব কুমার সরকার জানিয়েছেন, ডেঙ্গুজ্বরের তিনটি পর্যায় রয়েছে- জ্বর পর্যায়, জটিল পর্যায় এবং পুনরুদ্ধারের পর্যায়।
প্রথম পর্যায় বা ফেব্রিল ফেজে রোগীরা নরমাল থাকেন। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী এই ক্যাটাগরির।

জটিল বা ক্রিটিক্যাল ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীর সবই স্বাভাবিক থাকেন; কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা তিনি কিছুই খেতে পারছেন না। অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পর শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।

ডা. প্রবীর ক্রিটিক্যাল ফেজ সম্পর্কে বলেন, সাধারণত ৩-৭ দিনের মধ্যে তাপমাত্রা কমে যায়। এই সময়টা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ সময় প্লেটলেট সংখ্যার দ্রুত হ্রাসসহ হেমাটোক্রিটের মাত্রা বৃদ্ধির দিকে নজর রাখার ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। তবে জ্বর কমে যাওয়ার পরই দেখা যাচ্ছে প্লেটলেট কাউন্ট কমতে থাকে। এই সময় শরীরে পানিশূন্যতা দূর করার জন্য প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার ও বিশেষ যত্ন নেয়া একান্ত প্রয়োজন। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর জটিলতা যাতে তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন শুরু থেকেই করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর চারটি ভিন্ন সেরোটাইপ রয়েছে, যার অর্থ একজন ব্যক্তি জীবনে চারবার সংক্রমিত হতে পারেন। একবার যে সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হন সেই টাইপের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। সেকেন্ড টাইম আক্রান্ত হলে তখন অন্য আরেকটি সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হন।’

ডেঙ্গুর শেষ পর্যায় হলো পুনরুদ্ধার পর্যায়। এই সময়ের মধ্যে রোগীরা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে, যদিও তারা অবসাদ অনুভব করতে পারেন এবং সপ্তাহখানেকের জন্য অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নতুন তথ্য। গবেষণায় দেখা গেছে উলবাকিয়া মশা ডেঙ্গুসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগের বিস্তার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ বলেছেন, ‘উলবাকিয়াযুক্ত ভালো মশা ব্যবহারের এই সম্ভাবনাময় পদ্ধতির সফল প্রয়োগে পূর্ববর্তী আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত।’

ড. তাহমিদ আরও বলেন, মাঠপর্যায়ে সফল পরীক্ষার পরই কেবল এটিকে ব্যাপকভাবে পরিবেশে ছেড়ে দেয়ার কথা বিবেচনা করা উচিত।

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা ডেঙ্গু টিকা গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি। স্থানীয় পরীক্ষার মাধ্যমে টিকা ত্বরান্বিত করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী, যা দেশের ডেঙ্গু সমস্যার একটি সমন্বিত সমাধান দিতে পারবে।’

তবে কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলছেন, মশা নিধনে শুধু জেল-জরিমানা আর জনসচেতনতা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশানিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।




মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ