তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি তরুণ সমাজের
তামাক সেবনের ফলে মরণঘাতী ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছেন ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ। প্রাণঘাতী এই নেশাদ্রব্যের হাত থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছে তরুণ সমাজ।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তরুণদের করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলির সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. তনুশ্রী হালদার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার চ্যানেল আই’য়ের উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক হিসেবে ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের (সিটিএফকে) প্রোগ্রামস ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম মিয়া, কমিউনিকেশনস ম্যানেজার হুমায়রা সুলতানা এবং সিটিএফকের অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার আতাউর রহমান। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও সমাপনী বক্তব্য দেন নারী মৈত্রীর প্রকল্প পরিচালক খালেদ-বিন-ইউছুফ।
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তরুণ সমাজ যথাযথ ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করেন প্রধান অতিথি-যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান।
তিনি বলেন, তামাকের কারণে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ মারা যাচ্ছেন। মৃত্যুর এই মিছিল ঠেকাতে তরুণরা তামাক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবিতে তাদের কণ্ঠস্বরকে জোরালো করবে। পাশাপাশি নিজের পরিবারকে তামাকের প্রভাবমুক্ত রাখবে এবং অন্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যাতে মন্ত্রিসভায় সংশোধিত আইনটি দ্রুত উত্থাপন করেন সে লক্ষ্যে সহযোগিতা করা এবং অনুমোদনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরালো দাবি জানাতে তরুণ সমাজকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাছরিন আক্তার। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত ৬টি সংশোধনী দ্রুত পাস করার প্রতি জোর দেন তিনি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে সামঞ্জস্য আনতে অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা। তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা। তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
তিনি আরও বলেন, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা। তামাক পণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করার বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়া প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে শাহীন আকতার ডলি বলেন, দেশে ১৫ বছরের ওপরে ধূমপায়ীর সংখ্যা শতকরা ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং এর নিচে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিশুই ধূমপায়ী। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে কিশোর-তরুণদের নিজ অবস্থান থেকে তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
ড. তনুশ্রী হালদার বলেন, দেশে ব্যাপকহারে ই-সিগারের ব্যবহার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ভেপিং ব্যবহারের প্রবণতা তরুণদের মাঝে বেশি দেখা যায়, যা দেশের জন্য অশনিসংকেত। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষায় বাংলাদেশেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা জরুরি।
মো. আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, অল্পবয়সীদের নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডে আসক্ত করতে কোম্পানিগুলো নানা ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বা সামনের দোকানগুলোতে তামাকপণ্য সহজলভ্য করে তোলা হচ্ছে।
হুমায়রা সুলতানা বলেন, গর্ভবতী নারী ও শিশুরা ধূমপান না করেও প্রতিনিয়ত তামাকজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই পাবলিক প্লেস, গণপরিবহন ও রেস্তোরাঁয় ধূমপান যাতে কেউ না করে সে বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে তরুণদের সোচ্চার হতে বলেন তিনি।
উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী তরুণ ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াতে তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে আহ্বান করেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে