তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশের আহ্বান তরুণ সমাজের
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে তরুণ সমাজ। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত মানববন্ধনে এই দাবি তুলে ধরেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরাম, নারী মৈত্রী, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, প্রজ্ঞা, ডরপ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, উন্নয়ন সমন্বয়সহ একাধিক সংগঠনের সদস্যরা।
তারা আইন সংশোধনের জন্য ছয়টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের প্রদর্শন বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা, প্যাকেট বা কৌটায় সচিত্র সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ করা, খোলা তামাক পণ্য বিক্রি বন্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ উদীয়মান তামাক পণ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
মানববন্ধনে বক্তারা জানান, টোব্যাকো এটলাস ২০১৮-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যান। পরোক্ষ ধূমপানের ফলে নারী ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষত নারীদের গর্ভপাত, স্বল্প ওজনের শিশু জন্ম, এবং গর্ভকালীন জটিলতার মতো সমস্যার উল্লেখ করে তারা দ্রুত আইন পাসের আহ্বান জানান।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি জানান, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যেখানে এই সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রন আইন দ্রুত পাস করা জরুরী সেখানে তামাক কোম্পানিগুলোর নানান রকম মিথ্যাচার এটিকে বাঁধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী হলে সরকারের রাজস্ব কমে যাবে বলে তামাক কোম্পানি প্রচারণা চালাচ্ছে, যা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়, সে বছর তামাক থেকে রাজস্ব ছিল দুই হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছর ২০০৫-০৬ এ রাজস্ব আদায় হয় তিন হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে যখন আইনটি সংশোধন করা হয়, সেই বছর তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। বরং, কোম্পানিগুলো বছরে যে পরিমাণ রাজস্ব দেয় তামাকজনিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় তারচেয়ে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়। এমন বাস্তবতাকে এড়িয়ে তামাক কোম্পানিগুলো শুধু মুনাফা অর্জনের জন্য আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। শুধু তাই নয় প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে নানান রকম গুজব ছড়াচ্ছে তামাক কোম্পানি গুলো।
সিটিএফকে-র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, তামাক কোম্পানির নানান রকম প্রচার প্রচারণা তরুণদের ধূমপানে আসক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্বিগুণ। গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো জরিপের তথ্যমতে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশে ধূমপান আসক্ত কিশোর-কিশোরীর হার সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে প্রায় ১২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত। যুব সমাজই সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঢাল। তাই ভবিষ্যত প্রজন্ম রক্ষায় তরুণ সমাজকে তামাক কোম্পানির সকল কূটকৌশলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এজন্য মানববন্ধনে অংশ নেয়া সংগঠনগুলোর দাবি, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এটি বাস্তবতার নিরিখে অযৌক্তিক। কারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা শুধু সিগারেট বিক্রি করা ছাড়াও নানান রকম পণ্য বিক্রি করেন। তাই একটি পণ্যের বিক্রি বন্ধ হলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং দেশে ক্ষতিকর এই পণ্যের ব্যবহারের হার কমবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে