অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার ২০২৪
তুমি নোবেল পুরস্কার পেয়েছো, উঠো তাড়াতাড়ি
নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নোবেল কমিটি থেকে ফোন করা হয়। এর মাধ্যমে জানা যায় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রথম প্রতিক্রিয়া। নোবেল কমিটির ওয়েব সাইট থেকে এই সাক্ষাৎকারগুলো বাংলা ভাষান্তরসহ প্রকাশিত হচ্ছে ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর পাঠকদের জন্য। ২০২৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেলে পেয়েছেন তিন অধ্যাপক। পুরস্কার বিজয়ী তিনজন হলেন তুর্কি-আমেরিকান ড্যারন আসেমোগ্লু, ব্রিটিশ-আমেরিকান সাইমন জনসন ও জেমস এ রবিনসন। আজ প্রকাশিত হলো জেমস রবিনসনের প্রথম প্রতিক্রিয়া।
অর্থনীতে নোবেল পুরস্কার-২০২৪ বিজয়ী জেমস রবিনসন তখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তার নোবেল পুরস্কার খবর শুনে তার স্ত্রী মারিয়া অ্যাঞ্জেলিকা বাউটিস্তা তাকে তাড়াতাড়ি ডেকে তুললেন। নোবেল কমিটির এই ফোনে তিনি কথা বলেছেন দরিদ্রতার মূল কারণ নিয়ে, আর তা দূরীকরণে কীভাবে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া যায় তা নিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘অভিজাতরা যে অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বানায় সেগুলো যে ভালো তা না, বরং যারা অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ করে তারাই ভালো অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান বানায়।’
জেমস রবিনসন: হ্যালো?
এডাম স্মিথ: হ্যালো, জেমস রবিনসন বলছেন?
জেমস রবিনসন: হ্যাঁ, বলছি।
এডাম স্মিথ: হাই, নোবেল প্রাইজ ওয়েবসাইট থেকে এডাম স্মিথ বলছি।
জেমস রবিনসন: আচ্ছা, বলুন। ফোন করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার ম্যাসেজ পেয়েছি। আমার মোবাইল বন্ধ ছিল বলে দুঃখিত।
এডাম স্মিথ: আরে না। ঠিক আছে। পুরস্কার পাওয়ার কথা কীভাবে জানলেন?
জেমস রবিনসন: আমার স্ত্রী ডেকে উঠাল। তার এক বন্ধু তাকে ফোন করে জানিয়েছেন। সে আমাকে ডেকে তুলে জানাল।
এডাম স্মিথ: ঘুম থেকে উঠে শোনার মতো ভালো সংবাদ বটে। তিনি আসলে ঠিক কী বলেছেন?
জেমস রবিনসন: আমার মনে হয়, সে বলছিল, ‘তুমি নোবেল পুরস্কার পেয়েছো, উঠো তাড়াতাড়ি।’ না, না, আমার মনে হয় সে বলছিল, ‘উঠো, তোমার ওঠা দরকার।’ (হাসি) আর আমি বলছিলাম, ‘কেন?’ সে বলল, ‘তুমি নোবেল পুরস্কার পেয়েছো।’
এডাম স্মিথ: তারপরই আপনি বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠেছেন, অনুমান করি। আর তারপর থেকে এ পর্যন্ত নিশ্চয়ই আর এক সেকেন্ডের বিশ্রাম পাননি।
জেমস রবিনসন: হ্যাঁ, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা এসেছেন সকাল সাড়ে ৬টায়। গোসল করারও সময় পাইনি। কফিও খাইনি এখনো।
এডাম স্মিথ: সাব-সাহারান আফ্রিকা আর দক্ষিণ আমেরিকায় আপনি অনেক সময় কাটিয়েছেন। আমার মনে হয় ওখানে থাকলে আপনি আরও আগে খবরটি পেতেন।
জেমস রবিনসন: হ্যাঁ, এখন যদি গ্রীষ্মকাল হতো আপনি আমাকে ওখানেই পেতেন; কিন্তু এখন আমি শিকাতো আছি। এখানে পড়াচ্ছি।
এডাম স্মিথ: উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে দরিদ্র দেশগুলোর কেন এমন বৈষম্য?
জেমস রবিনসন: আচ্ছা, আমার মনে হয় এটা এক দীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার ফলাফল; কিন্তু আমাদের কাজে আমরা মূলত চিহ্নিত করেছি উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক আর রাজনৈতিক পার্থক্য। সুযোগ-সুবিধা আর প্রণোদনা দেয়ার নামে যে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি হয় তার মধ্যে যে কতটা ফারাক রয়েছে তা খুঁজে দেখাও আমাদের গবেষণার অংশ ছিল। আপনি জানেন এসব প্রাতিষ্ঠানিক দারিদ্র্য বা সমৃদ্ধি রেখা কীভাবে বিভাজিত হয় তা দেখানোই ছিল আমাদের কাজের উদ্দেশ্য।
এডাম স্মিথ: প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দিকে নজর দিয়েছে আপনার কাজ, আর বিশেষ করে ঔপনিবেশিকতার শেকড়ও খুঁড়ে দেখেছে; কিন্তু আপনি তো জানেন যে, প্রাতিষ্ঠানিক এই সিস্টেম পরিবর্তন করা কতটা কঠিন? এটা কি এমন কিছু যে...
জেমস রবিনসন: হ্যাঁ, এর দিকে আমরা নজর দিয়েছি। আপনি জানেন কঠিন-কঠোর-অনড় বহু বিষয় রয়েছে, তারপরও পরির্তনও ঘটছে পৃথিবীতে, যাকে আমরা বলি অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতি, অনেক দেশই এই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে হাঁটছে। আমি বলছি যে আজকের সব উন্নত দেশগুলোর দিকে যদি তাকান, তাহলে দেখতে পাবেন তারা সবাই ছিল শোষণকারী। যুক্তরাষ্ট্রের কথা ভাবুন, আপনি জানেন তাদের ইতিহাস দাসপ্রথা আর আদিবাসীদের ভূমি দখলের ইতিহাস। তারপর এই দেশের আরো অনেক শোষণের ইতিহাস আছে। তারপরও আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়া ও আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের লড়াই ছিল। আমার নিজের দেশ ব্রিটেনের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। তারপরও এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে, আমরা সেই বিষয়গুলো নিয়েও পর্যালোচনার চেষ্টা করছি।
এডাম স্মিথ: আমি জানি অল্প কথায় এগুলো বোঝানো কষ্টকর; কিন্তু শোষণমূলক সমাজ থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের চাবিকাঠি কী হবে বলে মনে করেন?
'প্রতিষ্ঠান কীভাবে গঠিত হয় এবং সমৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে’ তা নিয়ে গবেষণার জন্য জেমস এ রবিনসন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার ২০২৪ অর্জন করেন। ছবি: জেসন স্মিথ
জেমস রবিনসন: পরিবর্তনের চাবিকাঠি হবে প্রকৃতপক্ষে নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। যারা শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান, বৈষম্য এবং প্রান্তিক অবস্থায় আটকে আছেন, তাদের এ ক্ষেত্রে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। আপনি যদি নাগরিক অধিকার আদায়ের ইতিহাসের দিকে ফিরে দেখেন দেখবেন নিজেদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে মানুষ কীভাবে একত্রিত হয়ে লড়াই করেছে। এই শোষণমূলক অর্থনীতি আর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকেও ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে।
এডাম স্মিথ: সত্যিই, এর পর এ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
জেমস রবিনসন: ঠিক তাই। আপনি জানেন অভিজাতরা যে অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বানায় সেগুলো যে ভালো তা না, বরং যারা অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ করে তারাই ভালো অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান বানায়।
এডাম স্মিথ: দারুণ বলেছেন। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করতে চাই আপনার সহ-নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বন্ধুদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন? আপনাদের নিশ্চয়ই কাজের ক্ষেত্রে গভীর সম্পর্ক আছে। কী আপনাদের ভালোভাবে এক সঙ্গে চালিত করে?
জেমস রবিনসন: হ্যাঁ, আমরা খুব ভালো বন্ধু। আমি মনে করি আমরা সবাই বিভিন্ন বিষয়ে ভালো। আমরা সবাই সবাইকে খুব শ্রদ্ধা করি। নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কথা বলতে আমরা পছন্দ করি। আর ভালোবাসি দুনিয়া নিয়ে ভাবতে।
এডাম স্মিথ: আচ্ছা। খুব ভালো। বুঝতে পারছি আপনার চারপাশে এখন কী হচ্ছে। অনেক ধন্যবাদ। অনেক অনেক অভিনন্দন। আমাকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
জেমস রবিনসন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এডাম স্মিথ: বাই।
সূত্র: নোবেল প্রাইজ ডট ওআরজি
অনুবাদ: কামরুল আহসান।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে