রাজনীতি ও জনপ্রশাসন
মতিউরের দুর্নীতি আর ক্ষমতার কাছে পরাজিত হলেন বদিউর রহমান
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে নিয়ে দেশ টেলিভিশনে শেখ বদিউর রহমানের কথা শুনছিলাম। বদিউর রহমান সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘অফিসার ক্লাস ওয়ান’ পদে যোগ দিয়েছিলেন, পরে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে চলে যান। তাকে আমার মেজো ভাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিউদ্দিন আহমদের বাসায়ও দেখেছি, তাদের আড্ডায় তাকে মুড়ি ছাড়া আর কিছু খেতে দেখিনি।
সরকারি কর্মকর্তারা সব নাটের গুরু হওয়া সত্ত্বেও জবাবদিহির বাইরে
অনেক দিন আগে যখন চীনে গিয়েছিলাম তখন হোটেলের চারদিকে দেখলাম বড় বড় ক্রেন দিয়ে উঁচু উঁচু ইমারত তৈরি করছে। রাতারাতি বড় বড় শহর গড়ে উঠছে। আর বর্তমানে আমি যখন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করি, তখন প্রায়ই বড় বড় বাড়িঘর বা অট্টালিকা তৈরি হচ্ছে দেখে হৃদয়ে পুলক অনুভব করি। দেশের আনাচে-কানাচে উন্নয়নের কাজ হচ্ছে, গ্রামে-গঞ্জে ইলেকট্রিক বাতি জ্বল জ্বল করছে, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দেখে যারপরনাই আনন্দিত হই। তবে কিছুসংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ সরকারি আমলা ও টাউট-বাটপারদের জন্য দেশটি বদনামের ভাগী হচ্ছে। ফলে বিদেশিরা আমাদের উপদেশ দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এটা জাতির জন্য খুবই লজ্জাজনক।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস
মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জনাব শামসুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতারা দলের আত্মপ্রকাশের দিন হিসেবে ইতিহাস থেকে ২৩ জুন তারিখটি বেছে নিয়েছিলেন। কারণ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল।
হান্টার বাইডেনের দণ্ড ও তৃতীয় বিশ্ব
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রথম সন্তান হান্টার বাইডেন, যার বয়স এখন ৫৪, ড্রাগ ব্যবহার ও হাত বন্দুক কেনাসহ তিনটি বড় ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তার প্রথম ও দ্বিতীয় অপরাধ ফেডারেল ব্যাকগ্রাউন্ড চেক ফর্মে তার ড্রাগ ব্যবহার সম্পর্কে মিথ্যা বলা। তৃতীয় অপরাধ অবৈধ মাদকে আসক্ত থাকার সময় সঙ্গে বন্দুক রাখা। রায়ের পর মঙ্গলবার তার প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন বলেছেন, ‘আমি এই মামলার ফলাফল মেনে নেব এবং বিচার-প্রক্রিয়ার প্রতিও আমার সম্মান থাকবে।’
ঋষি সুনাক কি পারবে আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ব্রিটেনের বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে আগাম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। নানা জল্পনা-কল্পনার পর মে মাসের ২২ তারিখ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে আগামী ৪ জুলাই জাতীয় নির্বাচনের এই ঘোষণা দেয়া হয়; কিন্তু হঠাৎ কেন আগাম নির্বাচন চাইছেন ঋষি সুনাক? তবে অনেকের মনে আশা ছিল, জাতীয় নির্বাচন সময় মেনে আগামী শরৎকালে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সুনাক দুই বছর তার দপ্তরে থাকতে পারবেন। সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রগতির বড় সুযোগ পাবেন সুনাক; কিন্তু সেই প্রত্যাশা অধরাই রয়ে গেল। তবে এটা স্পষ্ট যে সিদ্ধান্তটা অনেকটা যেন ছুরির ফলার ওপর ঝুলেছিল।
১৬ জুনই কেন সংবাদপত্রের ‘কালো দিবস’?
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একসময় সাংবাদিকতাও করেছেন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিনিধি। তিনি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ষাটের দশক থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির যে সংগ্রাম- সেখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক মঞ্চে তিনি যখন প্রায় একাই পাঞ্জাবি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন সংবাদ জগতের কর্মীরাই ছিলেন তার অন্যতম প্রধান সহায়ক শক্তি। বিশেষ করে দৈনিক ইত্তেফাক তখন এক অর্থে আওয়ামী লীগেরই মুখপত্র ছিল। বঙ্গবন্ধুর মুখপত্র ছিল বলেও ভুল হবে না। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও বঙ্গবন্ধু ছিলেন একে অপরের পরিপূরক।
হরিজন সম্প্রদায়ের মিরনজিল্লা পল্লী উচ্ছেদ সিটি করপোরেশনের বিবেকহীনতার নামান্তর
একটি সমাজের সভ্যতার মাপকাঠি নিরূপণ করা হয় সেখানকার আইনের শাসনের মাধ্যমে। জাতি-ধর্মের পাশাপাশি মানবতা একটা দেশের জন্য বড় জিনিস। সেই মানবতা আর আইনের শাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজধানীর বংশালে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরিজন সম্প্রদায়ের মিরনজিল্লা পল্লীতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। এ উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষোভে-হতাশায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন একজন। স্কুল ড্রেস পরে স্কুলে যাওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে যোগ দেয় মানববন্ধনে।
ক্ষমতায় থাকাকালে প্রভাবশালীদের দুর্নীতির কথা কেউ জানে না!
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার প্রচারণা বিশ্বাস হয় না; কারণ তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছিলেন। শুদ্ধাচার মানে শুদ্ধ আচার, ভালো আচরণ, নীতি-নৈতিকতায় সমৃদ্ধ কর্মকাণ্ড। অফিসের কাজে সততা, নীতিনিষ্ঠতা, কর্তব্যপরায়নতা, একনিষ্ঠতা থাকলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শুদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে পুরস্কার দেয়ার নিয়ম রয়েছে। বেনজীর আহমেদ শুধু শুদ্ধাচার পুরস্কার নয়, পুলিশ বাহিনীতে সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি পাঁচ পাঁচবার বিপিএম পুরস্কারও পেয়েছিলেন। তার সততা না থাকলে শুধু সাহসের জন্য পাঁচবার বিপিএম পুরস্কার পাওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা কি আসলেই হুমকিতে?
খবরটি সত্যি হলে গা শিউরে ওঠার মতো। খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার শীর্ষ দশে বাংলাদেশ। জার্মানির বন থেকে প্রকাশিত বৈশ্বিক খাদ্যসংকট প্রতিবেদন বা গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৪-এর বরাত দিয়ে একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সংকটে থাকা সূচকে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকার অষ্টম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এই সূচকের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ৫৯টি দেশের প্রায় ১৭৬ মিলিয়ন মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে, যাদের মধ্য কিছু মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কঙ্গো, দ্বিতীয় নাইজেরিয়া, তৃতীয় সুদান, চতুর্থ আফগানিস্তান, পঞ্চম ইথিওপিয়া, ষষ্ঠ ইয়েমেন, সপ্তম সিরিয়া, অষ্টম বাংলাদেশ, নবম পাকিস্তান ও দশম মিয়ানমার। (খবরের কাগজ, ০১ জুন ২০২৪)।
ঐতিহাসিক ৭ জুন স্বাধীনতার চেতনার প্রারম্ভ বিন্দু
প্রতি বছর ৭ জুন, ‘৬ দফা দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় আমরা পালন করি। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ৬ দফা ও ৭ জুন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। জাতীয় জীবনে ৬ দফা ও ৭ জুনের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলার গণমানুষ ১৯৬৬ সালের ৭ জুন স্বাধিকার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী হরতাল পালন করেছিল। এ দিনে মনু মিয়া, মুজিবুল্লাহসহ অসংখ্য শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয় ঐতিহাসিক ৬ দফা। পরে ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনের সূচনালগ্নে ৬ দফা দাড়ি-কমা-সেমিকোলনসহ ১১ দফায় ধাবিত হয়ে, ১৯৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা এক দফা তথা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।