রাজনীতি ও জনপ্রশাসন
দেশে এখন কোনো প্রগতিশীল শক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না
বাংলাদেশে শক্তিমান, সমৃদ্ধিমান, উন্নতশীল, জনগণের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ কোন পথে- এ প্রশ্নের উত্তর আমরা সন্ধান করি। কেবল অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে কোনো সুফল নেই। এর দ্বারা বড় জোর এক অপশক্তির বদলে আরেক অপশক্তিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনা সম্ভব। গঠনমূলক চিন্তা ও কাজ দরকার। প্রচলিত আইন-কানুন, বিধি-ব্যবস্থা ও শৃঙ্খলাকে ভাঙতে হবে উন্নততর নতুন আইন-কানুন, বিধি-ব্যবস্থা ও শৃঙ্খলা প্রবর্তন করার জন্য; বিশৃঙ্খল অবস্থাকে স্থায়ী করার জন্য নয়। ভাঙতে হবে নতুন করে গড়ার জন্য- কেবল ধ্বংস করার জন্য নয়। এখন গড়ার ব্যাপারটাতেই গুরুত্ব দিতে হবে।
সংস্কার কতটা প্রয়োজন, কতটা টেকসই
‘সংস্কার’ শব্দটি ছোট; কিন্তু এর অর্থ এবং তাৎপর্য অশেষ, অসংখ্য। সংস্কারের ইংরেজি প্রতিশব্দ Reform. অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজ ডিকশনারিতে লেখা আছে, to make an improvement, especially by changing a person's behavior or the structure of something: এক কথায় বলা যায়, কোনো বিদ্যমান কাঠামো, কোনো বিদ্যমান সিস্টেম বা কোনো ব্যক্তির বিদ্যমান আচরণকে পরিবর্তন করে উন্নীত করাই হচ্ছে সংস্কার। তাই সংস্কার শব্দটি শুনলে পোড় খাওয়া জনগণ আশান্বিত হয়।
বিএনপি কেন ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়?
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পরে ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, বিএনপিও সেই সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার বা অংশীদার। কেননা যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এই সরকার গঠিত হয়েছে, বিএনপি তাদের অন্যতম। উপরন্তু আওয়ামী লীগের পতনের পরে বিএনপিকেই দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়; কিন্তু তা সত্ত্বেও জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ তথা ঠিক কবে নির্বাচন হবে- এ ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিএনপির খুব দ্রুতই দূরত্ব তৈরি হতে থাকে, যা গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) অনেকটাই ‘আউটবার্স্ট’ করলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দেয়া লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব আইন, বিধি-বিধান সংস্কারে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব পরিবর্তন জরুরি, তা সম্পন্ন করার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব।
ধর্ষণের সংখ্যা এবং ‘দৃষ্টান্তমূলক’ শাস্তির তর্ক
বান্দরবানে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ৪ তরুণ গ্রেপ্তার; রাজধানীর খিলক্ষেতে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্ত তরুণকে গণপিটুনি; নবাবগঞ্জে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রতিবেশীকে পিটিয়ে পুলিশে দিলো জনতা; রাজধানীর পল্লবীতে নির্মাণাধীন ভবনে আটকে রেখে নারী সংবাদকর্মীকে রাতভর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ; নরসিংদীতে ঘরে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণ ও ভিডিও করার অভিযোগ ইত্যাদি। এগুলো সাম্প্রতিক কিছু খবরের শিরোনাম। অনলাইনে সার্চ করলে এরকম আরও অনেক খবর পাবেন, যেগুলো মার্চ মাসেই ঘটেছে।
গণতন্ত্র সংকুচিত হওয়ায় সংকটের জন্ম
গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’; যার অর্থ হলো, ‘গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য।’ আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর পেনসিলভেনিয়া স্টেটে তার দেয়া গেটিসবার্গ বক্তৃতায় গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন এভাবে। এটি সর্বজনবিদিত একটি সংজ্ঞা। গণতন্ত্রের মূলনীতি নিয়ে খুব সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, গণতন্ত্রে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের বহুত্ববাদী ব্যবস্থা, ক্ষমতা পৃথকীকরণ ও শাখাগুলোর স্বাধীনতা থাকা জরুরি।
প্রশাসন দলীয়করণমুক্ত করা না হলে স্থবিরতা কাটবে না
আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসংখ্যা এবং সরকার- এই চারটি আবশ্যিক উপকরণের সমন্বয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। এই উপকরণগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং কোনো একটি ব্যতীত আধুনিক এবং পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। যে চারটি উপকরণের সমন্বয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল এবং একমাত্র পরিবর্তনশীল উপকরণ হচ্ছে সরকার। সরকার দেশের মালিক নন, দেশের জনগণের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমানতদার মাত্র। সরকার আসবে সরকার যাবে; কিন্তু রাষ্ট্রের অন্য তিনটি উপকরণ অপরিবর্তনীয় থাকবে। সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকবে কি থাকবে না তা নির্ভর করে সাধারণ মানুষের চাওয়ার ওপর। কোনো কারণে দেশের নাগরিকরা যদি সরকারের প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন হয় তাহলে নির্বাচনের মাধ্যমে তারা শক্তিশালী সরকারকেও পরিবর্তিত করতে পারে।
কথিত ‘তৌহিদী জনতা’ই কি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ‘কাল’ হবে?
পোশাক নিয়ে এক ছাত্রীকে হেনস্তার দায়ে বুধবার (৫ মার্চ) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে কথিত ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে একদল লোক শাহবাগ থানায় গিয়ে হট্টগোল করেন- যার কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তারা অর্ণবের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের হালচাল
গত ৩ মার্চ রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত’ ঘোষণা দিয়ে নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক নামে দুজন জামায়াতে ইসলামীর কর্মী বা সমর্থককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের কাছে একটি অস্ত্র ছিল যা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় লুণ্ঠিত থানার অস্ত্র বলে ধারণা করা হচ্ছে। অস্ত্র একটি নয়, নিহতদের পালিয়ে যাওয়া সঙ্গীদের হাতেও অস্ত্র ছিল এবং তাদের এলোপাতাড়ি ছোড়া গুলিতে ৫ গ্রামবাসী আহত হয়েছেন।
নারীর আজকের অবস্থান ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার ফল
এখন অনেক মেয়েদের মধ্যেও পুরুষশাসিত মনোভাব ঢুকে গেছে। এমন কি আমাদের দুজন নারী একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এ দেশের নারীদের তেমন কল্যাণ হয়নি। এর কারণ ওই দুজন নারীও আসলে পুরুষতান্ত্রিক। তাদের অবয়বটা নারীর; কিন্তু মস্তিষ্কটা পুরুষের এবং আমাদের অনেক ক্ষমতাবান নারীও এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার। তাই দুচারজন নারীর ক্ষমতা দিয়ে সর্বসাধারণ নারীর অবস্থান বিচার করা যাবে না। আমাদের সাধারণ নারীরা আজও অবহেলা, বঞ্চনা ও নানা নিপীড়নের শিকার। এখন বরং দিন দিন আরও বাড়ছে।
জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্রতই হোক সরকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রধান উদ্যোগ
আমাদের সবার জানা, সাধারণ অর্থে আইনের শাসন হলো আইনের সর্বোচ্চ প্রাধান্য। আইনের শাসনের মৌলিক নির্যাস হচ্ছে শাসনকার্যে স্বেচ্ছাচারিতার অনুপস্থিতি। এটি একটি সার্বিক প্রক্রিয়া এবং প্রায়োগিক বিষয় হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনপ্রণেতাদের মনোভাব জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার অনুকূলে হওয়া একান্ত জরুরি। ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-দল নয়, রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয় নির্ধারণের মাপকাঠি হবে আইন। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-শ্রেণি-দল-উপদল নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব নাগরিক আইনের চোখে সমান। রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক যেমন নিজস্ব প্রভাব বিস্তারে আইনের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না, তেমনি কোনো নাগরিকই আইনের চোখে নিম্নতর হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের তার কৃতকর্মের জন্য আইনের মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি তার অধিকার ও দাবির ব্যাপারে আইনের আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ অবশ্যই থাকতে হবে।