রাজনীতি ও জনপ্রশাসন
বাংলাদেশে অনুসৃত গণতন্ত্রের স্বরূপ
বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকলেও সকল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনুসৃত রীতি-পদ্ধতি এক নয়। তবে রীতি-পদ্ধতি ভিন্ন হলেও জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটে সরকার গঠনই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গণতন্ত্রের পক্ষে-বিপক্ষে প্রচুর কথা থাকলেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দেশের উন্নয়নের সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়; কিন্তু স্বৈরশাসকের আমলেও প্রভূত উন্নয়ন হয়। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো মুসলিম দেশে গণতন্ত্র নেই, জবাবদিহি নেই, নাগরিকদের বাক স্বাধীনতাও নেই; কিন্তু উন্নয়ন আছে। তাই শুধু উন্নয়ন দিয়ে গণতন্ত্রের বিচার করা ঠিক নয়। ফ্যাসিজম বিবেচনায় বাংলাদেশে অনুসৃত গণতন্ত্র আর মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই।
যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলেন কমলা হ্যারিস
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কেন হারলেন কমলা হ্যারিস? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় ভোটের লড়াইয়ে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম ভাষণ থেকেই। তিনি বলেছেন,‘আই অ্যাম নট গোয়িং টু স্টার্ট ওয়ার, আই অ্যাম গোয়িং টু স্টপ দ্য ওয়ারস। ’ এর অর্থ ডোনাল্ড ট্রাম্প আর কোনো যুদ্ধ চান না, বরং চলমান যুদ্ধগুলো থামাতে চান। নানা সমালোচনা, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্পের প্রথম বাক্যটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে নয় বরং বিশ্ববাসীকেই দারুণ আশান্বিত করেছে। আর এটাও যুক্তিসঙ্গতভাবেই বলা যায়, গত চার বছর ধরে জো বাইডেনের যুদ্ধ বিস্তৃতির নীতিতে অতিষ্ঠ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। তাই তারা ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর প্রতি আর আস্থা রাখতে চাননি। আর এ কারণেই কপাল পুড়েছে কমলা হ্যারিসের। জয়ের মুকুট চলে গেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাথায়। বাইডেনের ভুল নীতির কারণেই পপুলার ভোট, সিনেট আর কংগ্রেস- প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুস্পষ্ট বিজয় পেয়েছেন রিপাবলিকানরা।
নভেম্বর ১৯৭৫: ধোঁয়াশাপূর্ণ অধ্যায়ের ইতিবৃত্ত ও খালেদ মোশাররফের প্রচেষ্টা
১৯৭৫ সালের নভেম্বরের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে ২০২৪ সালের পালাবদলের একটি মিল রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর রাতে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর ৭ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো সরকার ছিল না। ২০২৪ সালেও শেখ হাসিনার পতনের পরও কয়েক দিন সরকারশূন্য ছিল। যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন ১৯৭৫ সালের নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক আবছা, রক্তাক্ত অধ্যায়। ইতিহাসের এই ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে পরস্পরবিরোধী দাবি আর দোষারোপের শেষ নেই। প্রায় ৫০ বছর পর রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো করে দিনটিকে পালন বা উদযাপন করে আসছে। কেউ করে অসমাপ্ত বিপ্লবের আক্ষেপ, কারও কাছে দিনটি বিপ্লব ও সংহতির আবার কারও কাছে দিনটি মুক্তিযোদ্ধা হত্যার শোকাবহ দিন। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় পর্যায় ও রাজনৈতিক পরিসরে দিনটি ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে পালিত হয়েছে। এ সময় গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রযন্ত্রে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের শক্তিশালী বয়ান প্রতিষ্ঠিত ছিল। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ২০২৪ সালে ভিন্ন আঙ্গিকে দিনটি পালিত বা উদযাপিত হবে। সামনে আসবে নতুন আলোচনা নতুন তথ্য, নতুন সমীকরণ, নতুন ব্যাখ্যা। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে আসুন একটু নির্মোহভাবে জানার চেষ্টা করি ঠিক কী ঘটেছিল ওই কয়েকদিন।
জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আগুন কী বার্তা দিল?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ কেসস্টাডি- যারা একই সঙ্গে সরকারে ও বিরোধী দলে থেকে ‘সরকারবিরোধী দল’ নামে একটি নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছিল। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে ক্ষমতার ভাগীদার হিসেবে তারা নানাবিধ সুবিধা নিয়েছে। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফে তাদের ‘স্বৈরাচারের দোসর’ বলেও আখ্যা দেয়া হয়েছে। ঘটনার পরম্পরায় গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেয়া হয়েছে। ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পরদিন শুক্রবার (পয়লা নভেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’
ভিসার অপ্রতুলতায় বাংলাদেশ থেকে ভারতের গন্তব্যে ফ্লাইট কমে যাচ্ছে
আন্তর্জাতিক কিংবা আঞ্চলিক যে কোনো বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশি যাত্রীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম আকাশপথ। অথচ জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাত্রীসংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর ভারতের ভিসা ইস্যু-সংক্রান্ত জটিলতার জন্য বাংলাদেশ থেকে জনপ্রিয় গন্তব্য ভারতের কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লিসহ বিভিন্ন রুটে যাত্রীসংখ্যা স্মরণকালের মধ্যে নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে।
মতিয়া চৌধুরী জনসেবাকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন
অগ্নিকন্যা খ্যাত মতিয়া চৌধুরীর মহাপ্রয়াণ মানেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে মতিয়া চৌধুরী দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখে গেছেন। অর্থ-বিত্তের প্রতি একান্তই নির্মোহ মতিয়া চৌধুরী ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও আদর্শের প্রতীক। তিনি তিনবার কৃষিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন; কিন্তু তার বিরুদ্ধে কখনোই দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির কোনো অভিযোগ ওঠেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বেগম মতিয়া চৌধুরী অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। কোনো বিলাসিতা তার মাঝে প্রত্যক্ষ করা যায়নি।
দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাই গড়বে শক্তিশালী বাংলাদেশ
কয়েকদিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনের এক অনুষ্ঠানে একজন বুদ্ধিজীবী বলেছিলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, তা নয়। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী চর্চা এবং অনুশীলন প্রয়োজন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের মাঝেও বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি ও গণতান্ত্রিক চেতনা জাগাতে হবে’।
নিয়ন্ত্রণহীন বাজার, দায় কার?
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। চাল-ডাল, তেল, মাছ-মাংস, চিনি ও ডিমের দাম তো বাড়ছেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শাক-সবজির ঊর্ধ্বমূল্য। শাক-সবজির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর এতে হিমশিম খাচ্ছে আমজনতা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হুট করে দাম কমে গিয়েছিল শাক-সবজির। সবাই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন। ভেবেছিলেন, এবার বুঝি সুখ ফিরে এলো; কিন্তু বাজারের এই অবস্থা টেকেনি দুদিনও। বৃষ্টি ও বন্যার অজুহাত দেখিয়ে আগের চেয়েও বেড়ে যায় বিভিন্ন সবজির দাম। এখন কোনো কারণ ছাড়াই লাগামছাড়া দাম কাঁচাবাজারের প্রায় সব পণ্যের। বেশিরভাগ সবজির কেজি ৮০ বা ১০০ টাকার ওপরে। ফলে ব্যাগ নিয়ে বাজারে ঢুকে হিমশিম খেতে দেখা যায় সীমিত আয়ের ক্রেতাদের। বাজার কে নিয়ন্ত্রণ করছে বা আদৌ কারও নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা, ক্রেতাদের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠছে। আগেই ভালো ছিল এমন কথাও কেউ কেউ বলতে শুরু করেছে।
‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ শব্দটা আবেগের বহিঃপ্রকাশ
এটা আসলে অনেকে কথার গভীরতা চিন্তা করে বলেন না। কারণ, স্বাধীনতা তো প্রতিটি জাতি একবারই অর্জন করে। আমরা অনেকে এটাকে ‘দ্বিতীয় মুক্তির সংগ্রাম’ বলছি। একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র পেয়েছি; কিন্তু রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তি পাইনি। স্বাধীন দেশ থেকেও এতদিন মানুষ পরাধীনতার মধ্যে ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত নিয়ন্ত্রিত ছিল। অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সর্বদা ভারতীয় আগ্রাসন ছিল। এ কারণেই ভারতের মদদপুষ্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর এটাকে আমরা ‘মুক্তি’ বলতে পারি। কিন্তু ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ কথাটাকে কোনোভাবেই সমাজবিজ্ঞান বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় সঠিক বলা যাবে না। এটা মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় সংস্কার হোক অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রায় দুমাস ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। দুমাস মেয়াদকাল কোনো একটি সরকারের কার্যক্রম মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট সময়কাল নয়। তারপরও আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক মূল্যায়ন করা যেতে পারে। দায়িত্ব গ্রহণের পর যে দুমাস গত হতে চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রাথমিক মূল্যায়ন হচ্ছে এ সময়ে ভালো ভালো অনেক কথা বলা হয়েছে; কিন্তু কাজ তেমন কিছুই হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক লোক পরিবর্তন করেছে। বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য বেশ কিছু কমিশন গঠন করা হয়েছে। বিষধর সাপকে আঘাত করতে হলে শক্ত লাঠির প্রয়োজন; কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে সেই শক্ত লাঠিও তাদের নেই, শক্তিও নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো নির্বাচিত সরকার নন। তাদের পেছনে রাজনৈতিক সমর্থনও তেমন একটা নেই। জনগণকে সংগঠিত করে তাদের সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালনার মতো ক্ষমতা এবং সক্ষমতা এই সরকারের আছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।