রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয় কিন্তু বাজার সিন্ডিকেটের বিলুপ্তি ঘটে না
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এখনো আড়াই মাস গত হয়নি। কাজেই এই অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। জাতীয় অর্থনীতি এবং রাজনীতেতে বিভিন্ন ধরনের জটিল সমস্যার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। তাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কার্যকর এবং উপযুক্ত সংস্কার সাধনের মাধ্যমে ব্যাপক ভিত্তিক অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্নাতীতভাবে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এ লক্ষ্যে তারা কাজ শুরু করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে সংস্কারের জন্য সুপারিশ প্রণয়নকল্পে বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব কমিটি তাদের সুপারিশ প্রদান করবে।
গত আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে জটিল সমস্যা হিসেবে বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নানাভাবে চেষ্টা করছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য; কিন্তু এখনো এ ক্ষেত্রে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা দেখা দেয়। উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকলেও জ্বালানি সংকটের কারণে পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়ায়। ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশ অতিক্রম করে গিয়েছিল। গত ৪০ বছরের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি এতটা উচ্চ মাত্রায় পৌঁছেনি। সে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) পলিসি রেট বারবার বৃদ্ধি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসরণে বিশ্বের অন্তত ৭৭টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের পলিসি রেট বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকও একাধিকবার পলিসি রেট বৃদ্ধি করে। আগে যেখানে পলিসি রেট ছিল ৫ শতাংশ, এখন তা সাড়ে ৯ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে; কিন্তু কিছু দিন আগ পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশে নির্ধারিত করে রাখা হয়েছিল। ফলে ব্যাংক রেট বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ সংকুচিত করার যে কৌশল তা ব্যর্থ হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পলিসি রেট একাধিকবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে আপার ক্যাপ তুলে দিয়ে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। পলিসি রেট বৃদ্ধি ও ব্যাংক ঋণের সুদের আপার ক্যাপ প্রত্যাহার করার ফলে বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদের হার অনেক বেড়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের ১৭ শতাংশ সুদ দিয়ে ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে; কিন্তু তারপরও এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাটাই এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে।
পলিসি রেট বৃদ্ধির পাশাপাশি ফিস্ক্যাল মেজার গ্রহণ করাসহ অন্যান্য যত ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা করতে হবে। এ মুহূর্তে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ইস্যুটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতির অভিঘাতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষগুলো খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তারা প্রত্যাশা করেছিল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বাজারে পণ্য মূল্য হ্রাস পাবে; কিন্তু তারা ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ তার ব্যবহার্য পণ্যের ২৫ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে মিটিয়ে থাকে। অবশিষ্ট ৭৫ শতাংশ পণ্যই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় বাজারে সংশ্লিষ্ট পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়; কিন্তু বিশ্ববাজারে কোনো পণ্যের মূল্য হ্রাস পেলে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় বাজারে তার প্রভার লক্ষ্য করা যায় না। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য যখন কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, তখন বুঝতে হবে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে।
এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে, দেশের বাজারে সব সময় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাদের আমরা চিনি। তারা রাজনৈতিকভাবে খুবই ক্ষমতাবান এবং সব সময় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়। অবশ্য কোনো সরকারই বাজারে তৎপর সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব স্বীকার করতে চান না। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয় কিন্তু বাজারে তৎপর সিন্ডিকেটের বিলুপ্তি ঘটে না। তারা সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান পাল্টে ফেলেন। অথবা একদল সিন্ডিকেট চলে গেলে তদস্থলে অন্য দল এসে তাদের তৎপরতা শুরু করে। গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্র ক্ষমতায় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বাজারে যারা সিন্ডিকেট পরিচালনা করত, তাদের অনেকেই আত্মগোপন করেছে; কিন্তু আর এক দল এসে সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে স্থানীয়ভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে পুরো মাত্রায় উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে। আমদানির ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাসজাত দ্রব্য আমদানি যতটা পারা যায়, কমিয়ে আনতে হবে। স্থানীয়ভাবে আমদানির বিকল্প পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিতে হবে। তবে ঢালাওভাবে আমদানি কমানোর নামে শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি যাতে হ্রাস না পায়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত হয় এমন উপকরণ আমদানি কমে গেলে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। যারা বিভিন্ন খাতে নতুন ব্যবসায় অথবা শিল্পোদ্যোগ গড়ে তুলতে চান তাদের জন্য জাতীয় পর্যায়ে উপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা যারা নতুন উদ্যোগ শুরু করতে চান, তাদের জন্য আনুষ্ঠানিক খাত থেকে অর্থায়ন প্রাপ্তি একটি বড় সমস্যা।
একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, দেশে ৪৫ হাজার এনজিও আছে। এনজিওদের প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণদান করা। তাহলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অর্থায়ন সংকটে ভুগছে কেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের ১১টি পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি রয়েছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য; কিন্তু এসব পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ঋণ বা অর্থায়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় পড়েন। আমাদের দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে এসএমই খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। অথচ এরাই অর্থায়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জটিলতার ভোগেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও উভয়ে মিলিতভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসায়বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে।
গ্রামীণ এলাকায় ক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ে তোলার কাজে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি চমৎকার কর্মসূচি রয়েছে। এই কর্মসূচির নাম ‘কৃষি ও পল্লি ঋণ’ কার্যক্রম। এটা সাধারণ কৃষি ঋণের মতো নয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে পল্লি এলাকায় কৃষিনির্ভর ছোট ছোট শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা। প্রচলিত ব্যাংক ঋণের চেয়ে এই কর্মসূচির জন্য প্রদত্ত ঋণের সুদের হার এক শতাংশ কম; কিন্তু পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে এই ঋণদান কর্মসূচি সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। এর মাধ্যমে কৃষক যত না উপকৃত হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে এনজিওরা। সিডিউল ব্যাংকগুলো যদি সরাসরি উদ্যোক্তাদের ঋণদান করে তাহলে ঋণ গ্রহীতা প্রচলিত ব্যাংক ঋণের সুদের হারের চেয়ে এক শতাংশ কম সুদে ঋণ পেয়ে থাকেন।
ব্যাংক একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে ৫ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারে; কিন্তু সেই ঋণ যদি ব্যাংক এনজিওর মাধ্যমে প্রদান করে সে ক্ষেত্রে সুদের হার প্রচলিত সুদ হারের চেয়ে এক শতাংশ কম; কিন্তু এনজিওরা যখন তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের ঋণদান করে তখন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) নির্ধারিত সুদ হার প্রয়োগ করে। এমআরএ নির্ধারিত সুদের সর্বনিম্ন হার হচ্ছে ২৪ শতাংশ। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে যে ঋণ ব্যাংক থেকে উদ্যোক্তাদের প্রচলিত সুদ হারের চেয়ে এক শতাংশ কমে পাবার কথা তা তারা ২৪ শতাংশ সুদে গ্রহণ করছে। ব্যাংকগুলো তুলনামূলক কম পরিশ্রমে নির্ধারিত ঋণদান লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য এনজিওদের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণ করছে। ব্যাংক তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের ৫ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারলেও এনজিওর মাধ্যমে ঋণ দানের ক্ষেত্রে কোনো লিমিট নেই। বর্তমানে নিয়ম করা হয়েছে, ব্যাংকগুলো ৫০ শতাংশ ঋণ নিজেদের উদ্যোগে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ এনজিও লিঙ্কেজে বিতরণ করবে।
কৃষি ও পল্লীঋণ কার্যক্রম থেকে এনজিওদের সম্পূর্ণ বাইরে রাখা প্রয়োজন। কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ কার্যক্রম যদি সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করা যেত, তাহলে গ্রামীণ এলাকায় প্রচুরসংখ্যক ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোগ গড়ে উঠতে পারতো। এতে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধিকেও সহায়ক হতো। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা। যারা বড় উদ্যোক্তা তারা কোনো না কোনোভাবে টিকে গেছে; কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনেকেই পুঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির অভিঘাত এই শ্রেণির মানুষের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে অপ্রতিষ্ঠানিক খাতের আকার বেশ বড়। মোট জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশের সমান অবদান রাখছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। এরা মূল্যস্ফীতির অভিঘাত সবচেয়ে বেশি ভোগ করছে। আর যারা আনুষ্ঠানিক উৎপাদন খাতের সঙ্গে জড়িত তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে যাবার কারণে তাদের আগের চেয়ে বেশি সুদ দিয়ে ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। আবার বাজারে গিয়ে তাদের উচ্চ মূল্যস্ফীতির অভিঘাত সহ্য করতে হচ্ছে। আমাদের দেশের অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে শুধু পলিসি রেট বৃদ্ধি করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এটা মনে করার কিছু নেই। কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য আর যেসব কারণ রয়েছে তা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থাৎ উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সব অর্গানকে একই সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। তবে সবার আগে বাজারে তৎপর সিন্ডিকেটকে দমন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। পণ্য পরিবহনকালে যে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণভাবে সব সুযোগ কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালাতে হবে।
আমরা যদি লক্ষ্য করি, তাহলে দেখব, বাজারে কোনো পণ্যের সরবরাহজনিত ঘাটতি নেই। আবার হঠাৎ করে কোনো পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাও নয়। তাহলে পণ্যের মূল্য এভাবে বৃদ্ধি পাবে কেন? দেশের প্রতিটি বাজারে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে; কিন্তু তাদের তৎপরতা বন্ধে তেমন কোনো উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে না। প্রতিটি দেশেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট থাকে; কিন্তু বাংলাদেশের মতো এতটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট খুব কম দেশেই আছে। কম্পিটিশন কমিশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে; কিন্তু তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে খুব একটা বেশি কিছু করতে পারছে না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আছে। তারা মাঝে মাঝে বাজার পরিদর্শন করেন; কিন্তু তাতে পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। যারা বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি মাধ্যমে পণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের আমরা চিনি। সরকারকে এদের সঙ্গে বসতে হবে। আলোচনা করতে হবে।
তারপরও যদি তারা এ ধরনের তৎপরতা থেকে বিরত না হয় তাহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট প্রায়ই যুক্তি প্রদর্শন করে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য মূল্য বৃদ্ধিও কারণে তারা স্থানীয়ভাবে পণ্য মূল্য বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন; কিন্তু তাদের এই বক্তব্য অধিকাংশ সময়ই সঠিক নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে অভ্যন্তরীণ বাজারে কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে পরবর্তীতে বিশ্ববাজারে সেই পণ্যটিও মূল্য হ্রাস পেলেও স্থানীয় বাজারে তার মূল্য কমানো হয় না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাটাই সবচেয়ে জটিল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হতেই হবে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব না হলে অন্য অনেক অর্জন ফিকে হয়ে যেতে পারে।
ফেরদৌস আরা বেগম: অর্থনীতিবিদ ও প্রধান নির্বাহী, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে